ভোদার সামনে সবাই কাদা [৪]

 

[৩১]

ঘড়ি বিকল হলেও সময় থেমে থাকে না।দেখতে দেখতে কেটে গেল  তিনটে বছর। পলাশডাঙ্গায় নতুন পৌরসভা হয়েছে।এ অঞ্চলের কাউন্সিলর হয়েছে গোবর্ধন বাবু।পাকা রাস্তা চলে গেছে একেবারে স্টেশন পর্যন্ত।পাঞ্চালি বাপের বাড়ী আসে কিন্তু পলাশডাঙ্গার উপর আগের মত সেই টান নেই।চেনাজানা প্রায় সবারই বিয়ে হয়ে গেছে।যারা আছে তারাও ব্যস্ত নানা কাজে।অত্যন্ত কাছের মানুষ নীলুও চলে গেছে কোথায় কেউ কোনো খবর রাখেনা । সব বদলে গেছে তার মধ্যে টিম টিম করে টিকে আছে গাছের ডালে ডালে পাখিদের সংসার নিয়ে কালাহারির জঙ্গল এখনো পুরানোর সাক্ষ্য বহন করছে।জঙ্গলের কাছে আসলেই পুরানো পলাশডাঙ্গাকে সনাক্ত করা যায়।সুচি সেই কবে গেছে কাকার বিয়ের সময় একবার এসেছিল তারপর আর ফিরে আসেনি।

রবিবার ছুটির দিন। দুইবোন ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছে।বাড়িতে অনি আর নীলাঞ্জনা। উপুড় হয়ে বুকে ভর দিয়ে বই পড়ছেন নীলাঞ্জনা।কোমর অবধি কাপড় তুলে নীলাদির পাছা ম্যাসেজ করছে অনির্বান।আচমকা একটা পা কাধে তুলে নিল অনি,নীলাঞ্জনা কাত হয়ে পড়ে বলেন,কি করছো ঠ্যাং চিরে যাবে তো।এ আবার কি খেলা?

যোণী আর গুহ্যদ্বারের মাঝখানের অঞ্চল টিপতে টিপতে অনি জিজ্ঞেস করে,কি ভাল লাগছে না?

–হুউম।

–একে সিবনি বলে।এখানে কুলকুণ্ডলিনির অবস্থান।মুনি ঋষিদের কুণ্ডলিনি জাগ্রত থাকে।মনন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।

অনির্বান দু-আঙ্গুলে চেরা ফাক করে মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে।নীলাঞ্জনা জিজ্ঞেস করলেন,কি দেখছো বলতো?

–জানো নীলাদি বেশি বয়স হলে গুদের elasticity আগের মত থাকে না।ভেবেছিলাম হয়তো সিজার করতে হতে পারে।কিন্তু তুমি দিব্যি নরম্যালি প্রসব করলে।

নীলাঞ্জনা হাসলেন। টুকুনকে বের করতে বেশ কষ্ট হয়েছিল সেদিন,ভেবে লজ্জায় রাঙ্গা হলেন।

–এতক্ষন ধরে এইসব ভাবছিলে?শোন তুমি করলে তাড়াতাড়ি করো ওদের আসার সময় হয়ে গেল।

–করবো?অনি নীচু হয়ে গুদে চুমু দিলেন।

মনে হল কেউ বেল বাজালো।নীলাঞ্জনা খিলখিল করে হেসে বলেন,তোমার মিতু এল মনে হয়।অনি দ্রুত কাপড় নামিয়ে দিলেন।নীলাঞ্জনা খাট থেকে নেমে দরজা খুলতে গেলেন।টুকুনটা দুই দিদিকে পেয়ে খুব খুশি,মার কথা মনেই পড়ে না।দরজা খুলে বিস্ময়ের সীমা থাকে না নীলাঞ্জনা বলেন, বড়দিভাই তুমি? জামাইবাবু আসেনি?

সুরঞ্জনা গম্ভীর গটগট করে ভিতরে ঢুকে একটা সোফায় গা এলিয়ে দিলেন।বোনের দিকে তাকিয়ে আলুথালু কাপড় চোপড় দেখে সন্দেহ হল,নিশ্চয়ই এই বিকেলে চোদাচ্ছিল।অল্প বয়সী ছেলে পেয়েছে  আর দেখে কে?

–জামাইবাবু কেমন আছেন?

–তোরা ভাল থাকতে দিলে তো? সুচি কোথায় ?

–ওরা বেরিয়েছে,আসার সময় হয়ে গেল।কি ব্যাপার বলতো?বলা নেই কওয়া নেই হুট করে চলে এলে?

–এখন ভাবছি তোর এখানে পাঠানোই ভুল হয়েছে। ওকে নিয়ে যাবো।

কথাটা নীলাঞ্জনার ভাল লাগে না বলেন,ঠিক ভুল জানি না যা করেছো তুমিই করেছো।যাক গে নিয়ে যাচ্ছো তোমার ইচ্ছে। সেই ছেলেটার কি খবর?

সুরঞ্জনা ভাল করে বোনকে লক্ষ্য করেন ওকে এত চিন্তা কেন তারপর বলেন,মাকে নিয়ে বাড়ি বেচে বহুকাল আগে চলে গেছে।

–কোথায় গেছে?

–তা কি করে বলবো?বছর খানেক আগে একবার এসেছিল নির্মল বাবু মারা গেলে।আমি দেখিনি তরঙ্গর কাছে শোনা। মনে হয় কোনো কাজ কম্ম করে তরঙ্গ বলছিল।ঝি-চাকরের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলা পছন্দ করিনা।

চাপা চা নিয়ে ঢুকলো,সঙ্গে অনির্বান।সম্ভবত দোকানে গিয়ে খাবার দাবার কিছু আনতে গেছিল।

–বড়দি ভাল আছেন?জিজ্ঞেস করেন অনি।

–হ্যা ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?শুষ্ক হাসি টেনে বলেন সুরঞ্জনা।

সুরঞ্জনা চা খেতে খেতে কি যেন ভাবছেন।এক সময় নিজেকে অসহায় মনে হয়,বোনকে বলেন,দ্যাখ নীলা ওর বন্ধুর ছেলে ডাক্তার কলকাতায় থাকে সুচির জন্য আগ্রহ আছে তুই একটু দেখিস।

–বড়দিভাই তুমি এভাবে বলছো কেন?আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি এম.এ পাস করার পরই বলেছি বিয়ের কথা।

–কি বলছে?

–কিছুই না,খালি হাসে যেন আমি মজার কথা বলেছি।

–কত বয়স হল জানিস?বিয়ে না হলে একটা মেয়ের জীবন কেমন যন্ত্রনাদায়ক তুই জানিস না?

–বড়দিভাই কিছু মনে করিস না,জীবনকে আমি এত পলকা ভাবতে পারছি না যে বিয়ে না হলেই জীবন বৃথা ।

–চুপ কর তাহলে তুই আবার বিয়ে না করলে পারতিস?

–আমি ডিভোর্স করার পর কখনো বিয়ের কথা ভাবিনি।অনি খুব ধরেছিল তারপর পারুর মত নিয়ে বিয়ে করেছি।মেয়েদের কি মনে করো তুমি?

–এবার বুঝতে পারছি মেয়েটা কেন এমন বিগড়ে গেল?

ছোটবেলা থেকে বড়দিভাই অত্যন্ত জেদি,অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতনা।বাপিও প্রশ্রয় দিতেন তার আদুরে মেয়েকে।নীলাঞ্জনার মনে হয় সতর্ক করে দেওয়া দরকার।সুচিস্মিতার আত্মসম্মানবোধ খুব তীব্র দেখলে শান্ত শিষ্ট নিরীহ বলে মনে হয়।বড়দি ভাইয়ের একেবারে বিপরীত।

–বড়দিভাই কিছু মনে কোরনা তোমাকে একটা কথা বলছি।সুচি বড় হয়েছে ওর সঙ্গে একটু সামলে কথা বোলো। বেশি জোর জবরদস্তি করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

— আমার মেয়েকে আমি জানি না?তোর কাছ থেকে জানতে হবে?

বড়দিকে বুঝিয়ে লাভ নেই সেই আগের মত আছে।হাল ছেড়ে দিলেন নীলাঞ্জনা।অনিকে নিয়ে সে  সুখে আছে বড়দিভাই পছন্দ করেনা। সুচি আসুক দেখা যাক কি হয়? একটা ঝড়ের আশঙ্কা থেকে যায় মনে। অনি ঘোরাঘুরি করছে।নীলাঞ্জনা মিটমিট করে হাসে।ঘর থেকে বেরোলেই জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে।চোদার খুব আগ্রহ তা নয়।সারাক্ষন নীলাদিকে ছুয়ে থাকতে চায়।মায়া হল বড়দিভাইকে বলে,তুমি বোসো আমি আসছি।

অনি ওত পেতে ছিল বেরোতেই ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলেন,নীলাদি তুমি তোমার দিদির কথায় কিছু মনে কোরনা।বড়দি নিজের মেয়েকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত মাথার ঠিক নেই।

নীলাঞ্জনা বুঝতে পারে অনি বাইরে থেকে সব শুনেছে,বলেন,আমি ভাবছি সুচি এলে কি হবে?

দরজায় বেল বাজতে নীলাঞ্জনা বলেন,দ্যাখোতো চাপা, ওরা এল বোধ হয়।চাপা দরজা খুলতে ওরা হৈ-হৈ করে ঢুকলো।ঘরে ঢুকে সুচি মাকে দেখে বিস্মিত হয়ে বলে,মাম্মি তুমি!কখন এলে?বাপি আসেনি?

সুরঞ্জনা কটমট করে মেয়েকে দেখেন কোন উত্তর দিলেন না। সুচি বলে,উঃ মাম্মি কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।সকাল থেকে আমার মনটা তাই কেমন কেমন করছিল।

–আমার জন্য তোমার মন কেমন কেমন করে?চিনুর বিয়ের পর একবার বাড়ি মুখো হলে না?

–কাকু কেমন আছে?

–চিনু আর আমাদের কাছে থাকে না।আলাদা বাসা করে বউ নিয়ে চলে গেছে। আমার কথার উত্তর দিলে না তো?বাড়ির কথা একেবারে ভুলে গেছো?

সুচিস্মিতা চুপ করে কি যেন ভাবে।সুরঞ্জনা জিজ্ঞেস করেন,কি হল উত্তর দিচ্ছো না যে?

–আমি তো বাড়ি ছাড়তে চাই নি,তোমার সঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলাম। তোমরাই আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে।

সুরঞ্জনা হোচট খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন,সারাদিন ধিঙ্গিপনা করে বেড়ালে চলবে?

সুচিস্মিতা মৃদু হেসে বলে, তাহলে কি করবো?

–বিয়ে করতে হবে না?কালই আমার সঙ্গে চলো,একটা ভাল ছেলে আছে।

–এখন বিয়ে করার কথা ভাবছি না।

–কত বয়স হল তোমার জানো,কবে ভাববে?তোমার জন্য কি সবাই বসে থাকবে?

–আমি কাউকে বসে থাকার জন্য বলছি না।

–এসব তোমার মাসীমণির কাছে শিখেছো?

–মাম্মী প্লিজ এর মধ্যে মাসীমণিকে টেনো না।আমি এখানে আর থাকছি না,আজই চলে যাবো।

—মানে?সুরঞ্জনা ভ্রু কুচকে তাকান।

নীলাঞ্জনা ঢুকে সুচিকে বলেন,তুমি যাও হাত মুখ ধুয়ে নেও।বড়দিভাই তোমাকে বলতে ভুলে গেছি সুচি মালদহে একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছে।আমি বলেছি তোর নম্বর খুব ভাল কলেজে চেষ্টা কর।

ও বলল সি.এস.সি বিজ্ঞাপন দিলে চেষ্টা করবে–।

–তুই থাম।নীলাঞ্জনাকে থামিয়ে দিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন,তুমি কাল আমার সঙ্গে যাবে?

সুচিস্মিতা চুপ করে থাকে কোন জবাব দেয় না।কিছুক্ষন পর সুরঞ্জনা বলেন,থাক আর বলতে হবে না, আমি বুঝেছি।

–বড়দিভাই তুমি কালই চলে যাবে?

–রাতে যাওয়া সম্ভব নয় উপায় কি?সুরঞ্জনা নিজেকে অপমানিত বোধ করেন। সেদিন সব কথা বিশ্বাস না হলেও এখন দেখছি চিনু ঠিকই বলেছিল,মনে মনে ভাবেন সুরঞ্জনা।

[৩২]

মাসীমণি অনিকে প্রণাম করার পর মাম্মিকে প্রণাম করলে সুরঞ্জনা পা সরিয়ে নিলেন না  পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিলেন।চোখের পাতায় চিক চিক করছিল জল। অনি পারমিতা এসেছিল স্টেশন পর্যন্ত তুলে দিতে।অনি বলল,পৌছে খবর দিও।

ট্রেন ছেড়ে দিলে পারু হাসতে হাসতে হাত নাড়ছিল সুচি জানে পারুটা খুব চালু হাসি দিয়ে বুকের কষ্টটা ঢেকে রাখতে চাইছে।ট্রেনের চিহ্ন মিলিয়ে যেতে পারু অনিকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলল।অনির্বান বাধা দিল না।সব সময় বাধা দিতে নেই।

কমলাবাড়ি উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।দোতলা এল টাইপ বাড়ি। একাদশ-দ্বাদশ ধরে বারোশোর উপর ছাত্রী। ছাত্রীদের হস্টেলে আমার মত জনা পাঁচ-ছয় শিক্ষিকার থাকার ব্যবস্থা।অধিকাংশ স্থানীয় এবং আর বাকীরা আশপাশ অঞ্চল থেকে আসেন।

রাতে শুয়ে শুয়ে টুকুনের কথা ভাবছিলাম,ভীষণ দুষ্টু হয়েছে।বেশ ছিলাম মাসীমণির বাড়িতে,একা থাকতে থাকতে এটাও অভ্যাস হয়ে যাবে।কিশোর বয়সের কথা মনে পড়ল।স্কুলে পড়ার সময় কখনো মনে হয়নি একদিন আমিও পড়াবো। স্কুলেই প্রথম দেখা নীলের সঙ্গে,বোকা বোকা নিরীহ ধরনের ছেলেটাকে দেখে কেমন ভাল লেগে গেল। একদিন মাসিকের প্যাড ওর গায়ে পড়েছিল ভেবে হাসি পায়। বোকাটা কিছুই জানতো না। এখন কোথায় আছে কি করে কে জানে।মাম্মি বলছিল ওরা আর পাড়ায় থাকে না।প্রথম প্রথম ওর জন্য মন কেমন করতো,এখন আর করে না।সত্যি কথা বলতে কি বিয়ে ব্যাপারটা   এখন তেমন নাড়া দেয় না।সত্যিই জীবনটা বেশ মজার।

হস্টেলের থেকে স্কুলের দুরত্ব আধ মাইল মত। ভালই লাগছে কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে, ধীরে ধীরে মানিয়ে নিচ্ছে সুচিস্মিতা।স্কুলের সম্পাদক সুখেন বর্মন বেশ সজাগ স্কুল নিয়ে।মাঝে মাঝেই স্কুলে আসেন খোজ খবর নিতে।প্রথম দিন নানা প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিল,ম্যাডাম এত বয়স হল বিয়ে করেন নি কেন?

–চাকরির সঙ্গে এটা কি খুব সম্পর্কিত?

–হে-হে না না এমনি জানতে ইচ্চে হল তাই–কিছু মনে করবেন না।

হেড মিস্ট্রেস সুপর্ণা মিত্র মুখ টিপে হাসছিলেন।পরে একান্তে বলেছিলেন,মেয়েদের সঙ্গে  কথা বলতে উনি পছন্দ করেন।মেয়ে হয়ে জন্মেছেন এই উৎপাত সহ্য করতে হবে।তার উপর আপনি বিয়ে করেন নি।

সুখেনবাবু স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত,ব্যবসায়ী মানুষ।স্কুলের জন্য অনেক টাকা দিয়েছেন তিনতলা করার জন্য খুব দৌড়াদৌড়ি করছেন।দেখতে দেখতে গ্রীষ্মাবকাশের সময় ঘনিয়ে আসে। একদিন টিফিনের সময় ছুটির ঘণ্টা পড়ে গেল।মেয়েরা হোই-হোই করে বই নিয়ে দিল ছুট।সুচিস্মিতা চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারে না। শিক্ষক কক্ষে এসে জানতে পারে কি মিটিং হবে সেজন্য ছুটি।

সুচিস্মিতা বিরক্ত হল,একটা নোটিশ দেওয়া উচিত ছিল।আঙ্গুরদি সবাইকে চা দিতে লাগল।স্কুলেই চা করেন,পুরানো চতুর্থ শ্রেনীর কর্মী। সবার কথা শুনে বোঝা গেল গ্রীষ্মাবকাশের আগে স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে সেই ব্যাপারে সুখেনবাবু দিদিমণিদের সঙ্গে কথা বলতে চান।উনি হেড মিস্ট্রেসের ঘরে বসে আছেন।বড়দির কথা মনে পড়ল।উনি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসেন।

বড়দির বয়স খুব বেশি নয় মনে হয় পাঁচের ঘরে।স্কুলে আসেন সেজেগুজে বয়স হলেও একটা লাবণ্য আছে চেহারায়। একটু পরেই সুখেনবাবুকে নিয়ে বড়দি এলেন।বড়দি জিজ্ঞেস করেলেন,চা খাওয়া শেষ তো?

সুখেনবাবু এসেছেন একটা জরুরী ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য। নিন শুরু করুণ।

সুখেনবাবু ঠোট চিরে হাসলেন। প্রতিবার আমাদের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।এবার আমাদের অনুষ্ঠানের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে।….অনেক ছাত্রীকে ভর্তি  করতে পারিনা   স্থানাভাবের জন্য দিদিমণিদের তা অজানা নয়।…..আমরা স্থির করেছি আমাদের বিল্ডিং   তিনতলা করলে বিষয়টা সুরাহা হতে পারে।……সেই উদ্দেশ্যে এবার অনুষ্ঠানে ডিআই এবং ডিএমকে আমন্ত্রণ করবো।যদি তাদের আনা সম্ভব হয় তাহলে সরকারী সাহায্যের ক্ষেত্রে খুব সুবিধে হবে।….আমি বড়দির কাছে শুনেছি মিস বোসের কথা উনি যদি কিছু দায়িত্ব নেন…. ওনার এই বিষয়ে জ্ঞান আছে।তাছাড়া অন্যান্য ব্যাপার সবাই মিলে ঠিক করবেন।আপনাদের উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

ঘণ্টা খানেক সভা হল।বুঝলাম আমাকে মেয়েদের নিয়ে কিছু করাতে হবে।হস্টেলে ফিরে ভাবতে বসলাম কি করা যায়।স্থির করি একটা ড্যান্স ড্রামা করাবো।তার আগে একটা স্ক্রিপ্ট তৈরী করা দরকার। যাক ভালই হল সময় কাটাবার একটা সুযোগ পাওয়া   গেল।

অনেক ভেবে কদিন পর রামায়নের একটা কাহিনী নিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখে ফেললাম–“শবরীর প্রতীক্ষা।” বড়দিকে দেখালাম পড়ে বললেন,বাঃ সুন্দর হয়েছে। ট্র্যাজেডি বাঙ্গালীর প্রিয় বিষয়।এখন দেখুন মেয়েরা কেমন করে?আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

–কি কথা বড়দি?

সুপর্ণা মিত্র হাসলেন।ঠোটে ঠোট টিপে এক পলক সুচিস্মিতাকে দেখে বললেন,আপনি এরকম  একটা বিষয় চয়েস করলেন কেন?অবশ্য প্রশ্নটা ব্যক্তিগত।

–না না ঠিক আছে।দেখুন বড়দি খুব একটা ভেবে চিন্তে করেছি তা নয়।রামায়ণে এই এপিসোডটা ভাল লেগে গেল তাই।

সুপর্ণা মিত্র হাসলেন।

বড়দির সবুজ সংকেত পেয়ে পুরোদমে শুরু করে দিলাম রিহার্সাল। ছন্দাদি আবৃত্তি   শ্রীলেখাদি কুইজ কণ্টেষ্টের দায়িত্ব নিয়েছেন।অনসুয়া চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করছে।

প্রায় প্রতিদিন টিফিনে ছুটির পর রিহার্সাল শুরু হয়ে যায়।সারা স্কুল জুড়ে যেন কর্ম যজ্ঞ চলছে।স্কুল পরিধি ছাড়িয়ে বার্তা রটে গেল সমগ্র অঞ্চলে।কলকাতা থেকেও নাকি কেউ কেউ আসাছেন।একদিন হন্তদন্ত হয়ে সুখেন্দুবাবু এলেন।খুব উচ্ছসিত মনে হল।ডি এম সাহেব সম্মতি জানিয়েছেন, ডি আই সাহেব আপত্তি করতে পারবেন না। নাচ থেমে গেছিল, সুখেন্দু বাবু অপ্রস্তুত।

–আমি আসায় অসুবিধে হল?অপ্রতিভ সুখেন্দু বাবু জিজ্ঞেস করেন।

মাঝে মাঝে কোমরে আচল জড়িয়ে নেচে দেখিয়ে দিতে হচ্ছে।একটু অস্বস্তি হলেও মুখের উপর না বলতে পারলাম না।

— “শবরীর প্রতীক্ষা” বিষয়টা কি?

–রামায়নের একটা তুচ্ছ উপকাহিনী। মতঙ্গ ঋষির আশ্রমে সেবিকা শবরী। তাকে   বোঝানো হয়েছে… একদিন শ্রীরাম চন্দ্র আসবেন সেদিন মুক্তি হবে শবরীর।অধীর প্রতীক্ষায় থাকে শবরী।একদিন সত্যি সত্যি শ্রীরাম চন্দ্র এলেন।শবরীর প্রতীক্ষার অবসান হল সে অগ্নিতে আত্মাহুতি দিয়ে যাত্রা করলো অনন্তলোকে।

সুখেন্দুবাবু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন।একসময় হুশ হয় লজ্জিত হয়ে বলেন,করূণ কাইনী।শুনেই চোখে জল এসে গেছে। না আগে দেখতে চাই না তাহলে নাটকের মজা চলে যাবে। আমি ডি এম সাহেবের সঙ্গে দেখবো।আপনার উপর অনেক ভরসা   আমার।

দিদিমণিদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল।মিস বোসের রূপ দেখে সম্পাদক মশাই মজেছেন।আসলে সুচিস্মিতার এতখানি গুরুত্ব তাদের সহ্য হচ্ছিল না। স্কুলের মাঠে বাঁশ পড়লো,ধীরে ধীরে গড়ে উঠল প্যাণ্ডেল। থানার ও সি একবার ঘুরে গেলেন সরেজমিনে।স্কুলের আশপাশে যে সব রোমিওদের ভীড় বাড়ছিল তারা ওসি কে দেখে বুঝল জায়গাটা তাদের কাছে নিরাপদ নয়।অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অঞ্চলে বিপুল প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে।তাছাড়া দিদিমণিদের মধ্যেও কৌতূহল নতুন এসে কি এমন করে সুচিস্মিতা। সব মিলিয়ে   তীব্র মানসিক চাপ তৈরী হয়।মেয়েগুলো কেমন করবে ওরাই সুচিস্মিতার ভরসা।

[৩৩]

হ্যালো মাইক টেশটিং …ওয়ান…টু…থ্রি….।সকাল থেকে ব্যস্ত কমলাবাড়ি স্কুল প্রঙ্গন।সুচিস্মিতা মেয়েদের বলেছে তিনটের মধ্যে যেন সবাই স্কুলে চলে আসে।  অনসুয়া   নেপথ্য হতে পাঠ করবে।ওর গলার স্বর বেশ মিষ্টি।অনেক খেটেছে সুচিস্মিতা তা ছাড়া   আর কিইবা করতে পারে,কেমন করবে মেয়েরা কে জানে।অনসুয়াও স্ক্রিপ্টের তারিফ করেছে।

সন্ধ্যে নামার আগেই ভরে গেল মাঠ। সুপর্ণা মিত্র সুন্দর সেজে এসেছেন।অনসুয়া মুচকি হেসে বলল,বড়দি পার্লারে গিয়ে সেজে এসেছেন। একটা ঘরে মেয়েদের সাজাচ্ছেন মেক আপ ম্যান। সুচিস্মিতা তাকে সাহায্য করছে।সুখেনবাবু ধুতি পাঞ্জাবী পরে একেবার বর বেশে হাজির।ডি এমের গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের ভীড় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিল।ডি এম সাহেবের একপাশে সুখেন বাবু আর একপাশে ডি আই মিঃ চাকলাদার। দিদিমণিদের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হল বড়দি মঞ্চে ঢুকে সবাইকে নমস্কার করলেন।

সুখেনবাবু উঠে ঘোষণা করলেন,মাননীয় ডি এম সাহেবকে আমাদের মধ্যে পেয়ে   সম্মানিত বোধ করছি।তিনি ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের আবানে সাড়া দিয়ে   এখানে   এসেছেন সে জন্য স্কুলের পক্ষ হতে তাকে আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন বিদ্যালয় পরিদরশক মি.চাকলাদার তাকেও আমাদের কৃতজ্ঞতা   জানাই।এবার বিশিষ্ট অতিথিদের মাল্যভুষিত করে বরণ করার পালা।

সুখেনবাবু বড়দির দিকে তাকালেন।বড়দি চোখের ইশারায় কি যেন বলে একটা চিরকুট এগিয়ে দিলেন। সুখেবাবু চিরকুটে চোখ বুলিয়ে বললেন,আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রীমতী জয়ী সরকার প্রধান অতিথিকে মাল্যদান করছে।

একটি সুবেশা পুতুলের মত মেয়ে মালা নিয়ে মঞ্চে বসা ডি এম সাহেবের গলায় পরিয়ে   দিল।করতালিতে মুখর হল,সুখেনবাবু আবার বললেন,এবার অতিথিকে মাল্যদান করবে   আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্রী মতী সুলেখা সান্যাল।

সুচিস্মিতা চন্দনের টিপ দিয়ে সাজাচ্ছে শবরী রুপী দেবজয়াকে।বাইরে তখন সুখেনবাবুর বক্তৃতা শুরু হয়ে গেছে।বিদ্যালয়ের প্রশংসা ডিএম সাহেবে প্রশংসা কি কষ্টের মধ্যে বিদ্যালয় চালাতে হচ্ছে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তিনি বললেন।পরিশেষে  আকুলভাবে ডি এম সাহেবের সহযোগিতা কামনা করলেন।বক্তৃতা শেষ করে বললেন,এবার আমি   আমাদের জেলা শাসক শ্রী নীলাভ সেনকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করছি।শ্রী নীলাভ সেন।

নামটা কানে যেতে সুচিস্মিতার হাত কেপে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।দ্রুত সাজানো শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসে।আড়াল থেকে দেখে,মাইকের সামনে   দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক।এক মাথা কালো চুল কানের কাছে চিক চিক করছে কয়েক গাছা রুপোলি চুল।চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা।একী নীল?চেনাই যাচ্ছে না।সেই বোকা বোকা চেহারা আর নেই।ঠোটের নীচে গাম্ভীর্য। তার ভুলও হতে পারে। মাননীয় সভাপতি,জেলা পরি দর্শক এবং প্রধান শিক্ষিকা অন্যান্য সহকারী শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী সর্বোপরি আমার স্নেহের ছাত্রী বৃন্দ।উপস্থিত অন্যান্য সুধী বৃন্দ,আজকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার কাছে শুনলাম,ছাত্রীদের দ্বারা পরিবেশিত হবে “শবরীর প্রতীক্ষা”,আপনারা তার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন আমি জানি।নিয়ম রক্ষার খাতিরে দু-একটা কথা আমি বলছি। আজ আমার মনে পড়ছে ছাত্র জীবনের কথা।জীবনের সব থেকে গুরুত্ব পুর্ণ  ছাত্র জীবন।জীবনের এক চরম অধ্যায় কৈশোর শেষ হয়ে যৌবন অভিমুখে যাত্রা…আজও আমাকে হাতছানি দেয় সেই স্কুল জীবন। বড় হলে একদিন তোমরাও বুঝবে।….. শিশু কিশোর চিত্ত ঈশ্বরের আবাসন।এখানে কোন মালিন্য নেই।এদের সাহচর্যে দূর হয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত গ্লানি।…আমার বাড়িতেও একটা ছেলে আছে। সারাক্ষন তার মায়ের সঙ্গে কাটে….সারাদিন খাটা খাটনির পর বাড়ি ফিরে তার সংস্পর্শে যখন আসি মনের সমস্ত ক্লান্তি অবসাদ যেন মুহুর্তে সরে   গিয়ে পাই অপার শান্তি… ভদ্রলোক বিবাহিত? এত বয়স হয়েছে বিয়ে হওয়া স্বাভাবিক।সুচিস্মিতার চোখ ঝাপসা  হয়ে এল।

…..আমাকে এমন সময় ডাকা হল যখন আমার বদলির খাড়া ঝুলছে মাথার উপর …অন্যত্র বীরভুমে…তবু আমি কথা দিচ্ছি যাবার আগে যতদুর সম্ভব কিছু একটা করে  যাবো…সম্পাদক মশাইকে অনুরোধ অফিসে তিনি যেন দেখা করেন…তাছাড়া ডি আই সাহেব থাকলেন অতি অমায়িক মানুষ….সবাইকে আমার প্রীতি-শুভেচ্ছা ভালবাসা ও নমস্কার জানিয়ে আজকের মত শেষ করছি।

ভদ্রলোক কোন স্কুলে পড়তেন বললে বোঝা যেতো উনি নীল কিনা?নামের মিল থাকলেও কথা বলার ঢং একেবারে অন্য রকম।একবার ইচ্ছে হল সামনা-সামনি হবে কিনা পরমুহুর্তে নিজেকে সংযত করে সুচিস্মিতা।কি দরকার বিয়ে-থা করে সংসারী   হয়েছে   যদি নীলও হয় তাহলে মিথ্যে বিড়ম্বনা বাড়িয়ে কি লাভ?সাজ ঘরে ফিরে দেখল প্রস্তুতি সারা।সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।সুচিস্মিতা জিজ্ঞেস করে, অনসুয়া কোথায়?

মেয়েরা বলল,দিদিমণি অনসুয়াদি মাইক ম্যানের সঙ্গে কথা বলে সব ব্যবস্থা করতে গেছেন।

দর্শক আসনের সামনের সারিতে নীলাভ সেন তার একপাশে বড়দি   অন্যপাশে   মি.চাকলাদার।পর্দা উঠতে সুরু হল  দিদিমণিদের “নব আনন্দে জাগো” উদবোধনী সঙ্গীত।

অনসুয়া এসে খবর দিল,ডিএম সাহেবের তাড়া আছে।বড়দি বললেন, উদবোধনী সঙ্গীতের পরই নাচ শুরু করতে হবে।পুরস্কার বিতরণী পরে। বিরক্তিকর লাগে এভাবে হুট করে ফরমাশ করলে হয়?তাগাদা দিল সুচি,তাড়াতাড়ি করো দেবজয়া।দেবজয়ার প্রধান ভুমিকা।অনসুয়া মাইকে ঘোষণা করল,মঞ্চ গুছিয়ে নিতে দু-মিনিট সময় চেয়ে নিচ্ছি।কিছুক্ষণ পর আবার পর্দা উঠল,আলো জ্বলতেই মঞ্চে নাচের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকা দেবজয়া ধীরে ধীরে চোখ তোলে।শুরু হল “শবরীর প্রতীক্ষা।”

মঞ্চে আশ্রম পরিবেশ।সবাই মুগ্ধ হয়ে   দেখছে। পিছন থেকে বর্ণণা করছে অনসুয়া।দেখতে দেখতে নীলাভ সেন বলেন, রামায়ণে রাম-রাবণের কথা আছে জানি।এইসব ছোটো ছোটো উপকাহিনীর খবর সবাই জানে না।স্ক্রিপ্ট কোথায় পেলেন?

–আমাদের দিদিমণিরাই সব করেছেন।বড়দি বললেন।

–বেশ সুন্দর নাচছে কিন্তু।

–কেউ নাচ শেখে না।দিদিমণিরাই ট্রেণ্ড করেছেন।

–উনি নিশ্চয় নাচ জানেন?

–শান্তি নিকেতনের ছাত্রী ছিলেন।

পাশে বসা সুখেন বাবু অত্যন্ত বিরক্ত।ইচ্ছে ছিল ডি এমের পাশে বসবেন তার আগেই সুপর্ণা মিত্তির বসে পড়েছে।এমন ঢলাঢলি জানে ডি এম দেখে একেবারে গদগদ।বিয়ে হয়েছে ঘরে স্বামী আছে তবু ছোকছোকানি গেলনা।দেখো কেমন সেজেছে যেন কচি খুকি।সুপর্ণা মিত্র লক্ষ্য করেন ডি এম সাহেবের চোখ চিকচিক করছে।চোখাচুখি হতেই নীলাভ সেন লজ্জিতভাবে বলেন,আমি একটু সেণ্টিমেণ্টাল।রুমালে চোখ মুছলেন। শবরীর ভুমিকায় মেয়েটির চোখের ভাষায় ফুটে উঠেছে হাহাকার। বুকের চাপা বেদনা যেন শারীরি ভঙ্গীতে স্পষ্ট।

শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলেন না ডি এম সাহেব।ওসি এসে খবর দিলেন,এস পি সাহেব কি জরুরী ব্যাপারে কথা বলতে চান।নীলাভ সেন দুঃখ প্রকাশ করে বিদায় নিলেন।সুখেন বাবু এগিয়ে দিতে গিয়ে স্মরণ করিয়ে দিলেন,স্যর আমি দু একদিনের মধ্যে দেখা করছি।

–অবশ্যই দেখা করবেন।

অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত এগারোটা বেজে গেল।সবাই খুব প্রশংসা করলো। এত অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে এমন সুন্দর হবে কেউ ভাবেনি।অন্যান্য দিদিমণিরা সামনে  প্রশংসা করলেও ভিতরে ভিতরে আশাহত।ধারণা ছিল হাস্যকর কিছু হবে। রামায়নের কাহিনী কেউ এখনকার দর্শক ভাল ভাবে নেবে না।কাল প্রায় সবাই বাইরে থেকে আসছে। আধুনিক গান গম্ভীরা গানের দল প্রভৃতি অংশ নেবে। সুচিস্মিতা এসে খোজ করতে জানলো ডি এম চলে গেছেন।মনে একটা আফশোস রয়ে গেল জানা হল না কে এই নীলাভ সেন? অবশ্য একদিক দিয়ে ভালই হল যদি ইনি নীলু হন তাহলে হয়তো কষ্ট পেতো।

দিন তিনেক পর আবার স্কুল শুরু হল।দুদিন পর গরমের ছুটি তাই কেমন একটা গাছাড়া   ভাব।ছুটি পড়লে মাসীমণির কাছে যাবে,কতদিন দেখা হয় না টুকুনের সঙ্গে তাছাড়া পারমিতা আছে।

[৩৪]

আজ স্কুলে শেষদিন।কালথেকে শুরু হবে গ্রীষ্মাবকাশ।ছুটির পর শিক্ষিকাদের কক্ষে   আলাপ চলছে।কাল থেকে কারো সঙ্গে কারো দেখা হবে না তাই যাবার আগে একটু হাল্কা আলোচনা। বড়দি বেশ মজার কথা বললেন,আচ্ছা ঐ ডি এম কি ম্যারেড?

–কেন বড়দি হাতে কোন মেয়ে আছে নাকি?ছন্দাদি বললেন।

–ম্যারেড।শুনলেন না ওর বাড়িতে একটা ছেলে আছে।

–হ্যা হ্যা তাইতো খেয়াল ছিল না।দেখে কিন্তু ম্যারেড মনে হয় না।

সবাই হো-হো করে হেসে উঠল।কৃষ্ণাদি বললেন,দেখে বুঝতে পারেন?

–না ঠাট্টা না।মেয়েদের কপালে সিন্দুর দেখলে বোঝা যায় ছেলেদের ঐসব বালাই নেই কিন্তু বিয়ের পর আচার ব্যবহারে ছেলেদের মধ্যে একটা পরিবর্তনের ছাপ পড়ে।

এবার কেউ হাসলো না।সবার মনে হয় বড়দির কথা উড়িয়ে দেবার মত না।

–যা লাল্টু চেহারা এতবড় পোস্টে চাকরি করেন এতদিনেও কি বিয়ে হবে না?কৃষ্ণাদি চিন্তিত গলায় বললেন।

–বাদ দাও উনি টাকার প্রতিশ্রূতি দিয়েছেন এটাই আমাদের সাফল্য।বড়দি বললেন।

–বড়দি না আচালে বিশ্বাস নেই,ওরকম অনেকেই বলে। আগে টাকা আসুক।

–আমার ভদ্রলোককে সেরকম মনে হলনা।

ছন্দাদি জিজ্ঞেস করলেন,আপনার কেন এমন মনে হল?

–আমি পাশে বসেছিলাম,নৃতনাট্য দেখতে দেখতে উনি বার বার রুমাল দিয়ে চোখ মুছছিলেন।এমন হৃদয়বান মানুষ মিথ্যে বলতে পারেনা।

সুচিস্মিতা চুপচাপ কিছু বলছে না।ডিএমকে সবার নজরে পড়েছে।মেয়েদের এই  হ্যাংলামী ভাল লাগে না। পরিবেশ কেমন গম্ভীর হয়ে যায়।ছন্দাদি বলেন,ছুটিতে কার কি প্লান আছে?কেউ কি বেড়াতে যাচ্ছো?

–একদিন সুচিস্মিতার বাড়ি গেলে হয় না?আমার শান্তি নিকেতন দেখা হয় নি। অনসুয়া বলে।

–আহা কথার কি ছিরি! তোমার না হয় বিয়ে হয়নি,আমরা ওকে ছেড়ে তোমাদের সঙ্গে ঘুরতে বয়ে গেছে।

এবার সবাই হো-হো হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে।অনসুয়া অপ্রস্তুত বোধ করে এদিকটা সে ভেবে   দেখেনি। বাড়িতে তার বিয়ের কথা চলছে।একে একে সবাই চলে যায়।সুপর্ণা মিত্র নিজের ঘরে বসে কিছু কাজ সারছেন।অনসুয়া সুচিস্মিতার রুমমেট,দুজনে হস্টেলে যাবার আগে বড়দির সঙ্গে দেখা করতে এল।সুচিস্মিতা বলল,আমরা আসি বড়দি।

–ওঃ মিস বোস?একটু বোসো,আমিও যাবো।

দুজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে,বড়দি বলেন,তুমিও বোসো।

বড়দি হাতের কাজ শেষ করে বললেন,আবার একমাস কি বলো?

আঙ্গুরদি চাবি নিয়ে অপেক্ষা করছে।বড়দি বের হতে ঘরে তালা দিল।বড়দি ভুল করে  ছাতা ফেলে এসেছিলেন,আঙ্গুরদি ছাতাটা দিয়ে গেল। চলতে চলতে এক সময় সুপর্ণা মিত্র বলেন,মিস বোস তোমাকে একটা কথা বলি।

সুচিস্মিতা চিন্তিত বড়দি বিয়ে নিয়ে কিছু বলবেন নাতো?

–তুমি কেন বিয়ে করোনি সে ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।একটা কথা খুব আন্তরিক ভাবে বলছি,তুমি লেখো।তোমার লেখার হাত খুব ভাল।একসময় আমার লেখালিখির খুব ঝোক ছিল–।

–ছাড়লেন কেন?

সুপর্ণা মিত্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,পারিবারিক জীবনে আমি সুখী,কোন ক্ষোভ নেই সে ব্যাপারে।কিন্তু ওর এইসব লেখালিখি ইত্যাদি ব্যাপারে কোন ইন্টারেষ্ট নেই।একজন কেউ যদি পাশে থেকে উৎসাহ না দেয় বেশিদিন দম রাখা যায় না।ডিএম সাহেবকে দেখে কথা বলে ওকে আমার একজন ইন্টেকচুয়াল বলে মনে হয়েছে।আমরা পাশাপাশি বসে অনেক আলাপ করেছি। নিজের মধ্যে অন্য রকম একটা অনুভুতি…।

অনসুয়া হাতে চাপ দিল সুচিস্মিতার।সুচিস্মিতা আমল দেয় না বড়দির কথা বোঝার চেষ্টা করে।

–বিয়ের পর সব কিছুই মনের মত হয় না,আমরা মানিয়ে নিই। সবারই এরুকম মুহুর্ত আসতে পারে কখনো কিন্তু সামাজিক ইনহিবিশন তাকে পরিণত হতে দেয় না।সুপর্ণা মিত্রকে নতুন করে চিনছে সুচিস্মিতা।দৈনন্দিন কাজের মধ্যে মানুষটাকে এভাবে দেখার সুযোগ ঘটেনি।পরস্পর মিশলেও আমরা কতটুকু চিনতে পারি পরস্পরকে?

–এইদেখো কথা বলতে বলতে রিক্সাস্ট্যাণ্ড ছেড়ে চলে এসেছি।সুপর্ণা মিত্র বললেন। মিস বোস কি আজই চলে যাবেন?

–হ্যা বড়দি আজ রাতের গাড়িতে উঠবো তাহলে ভোরবেলা পৌছে যাবো।সুচিস্মিতা বলে।

–যা বললাম মনে রাখবে।

সুচিস্মিতা হেসে সম্মতিসুচক ঘাড় নাড়লেন।বড়দি চলে যেতে অনসুয়া বলল,প্রেমের বীজ এখনো শুকিয়ে যায় নি।

–বীজ মাটির তলায় চাপা থাকে জল বাতাস পেলেই অঙ্কুরিত হবার চেষ্টা করে।

সুচিস্মিতার কথা শুনে চোখ বড় করে অনসুয়া তাকে দেখে।জিজ্ঞেস করে,তোমার মধ্যে কি বীজ চাপা আছে?

সুচিস্মিতা হেসে বলে,মাটির নীচে আমি কি দেখেছি,হয়তো আছে।

ট্রেন রাত নটায় এখন একটূ গড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে।গোছগাছ আগেই সারা। বাথরুমে গেল সুচিস্মিতা,চোখে মুখে জল দেয়।হু-হু করে কেদে ফেলে।কান্নার কি হল বুঝতে পারে না কিন্তু ভাল লাগছে কাদতে।কিছুক্ষন কাদার পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।অনসুয়া   চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে কি যেন ভাবছে।

–আচ্ছা সুচিস্মিতা একটা কথা বলবে?

–কি কথা?

–এমন কিছু না।তুমি কারো সঙ্গে প্রেম করেছো?এত বয়স হল বিয়ে করোনি তার পিছনে কোনো কাহিনী লুকিয়ে নেইতো?

সুচিস্মিতা হাসে মনে মনে,ভাবে কি বলবে?পাশের খাটে শুয়ে বলে,বিশ্বাস করো এর উত্তর আমার জানা নেই।

–বুঝলাম না।

–প্রেম করিনি বলতে পারবো না আবার প্রেম করেছি তাও বলা ঠিক হবেনা। আর বিয়ে করিনি কারণ বিয়ে করার মত কাউকে পাইনি।

–বুঝেছি তার মানে একতরফা?

–এক না দুই তরফা আমার জানা নেই।কি ব্যাপার এখন এসব নিয়ে পড়লে?

অনসুয়া কিছুক্ষন চুপ করে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।তারপর একসময় নিজে   নিজেই বলে,তুমি বলছিলে না মাটির তলায় বীজ চাপা থাকে।ঠিকই বলেছো,বীজ চাপা ছিল কিন্তু পচে গেছে।আর অঙ্কুরিত হবে না।

ঘরের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠল।হাল্কাভাবে বলা কথা অজ্ঞাতসারে অনসুয়ার কোথাও গিয়ে স্পর্শ করেছে হয়তো। কৌতুহল দমন করে সুচিস্মিতা ঘুমোবার চেষ্টা করে। অনসুয়ার মন অতীতের পথ ধরে হেটে চলেছে,কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কলেজ যাবার পথে দেখতো চাতকের মত দাঁড়িয়ে একটি ছেলে।পরে নাম জেনেছে অতীন।দেখতে দেখতে কেমন মায়া পড়ে যায়। একদিন ওকে অতিক্রম করে আবার পিছন ফিরে তাকায়।তাতেই অতীনের সাহস বাড়ে,এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, আপনার নামটা জানতে পারি?

–পাঁচি।

–আমার নাম কি জানেন?

–আমার জানার দরকার নেই।

–আপনার নামের সঙ্গে আমার নামের খুব মিল।

–আপনার কি নাম?

–পচা।

হাসি সামলাতে পারে না অনসুয়া।অতীনও হেসে বলে,আপনার নামের যা আদ্যক্ষর আমারও তাই।অনসুয়া শুরু অ-দিয়ে অতীনও।

–তাহলে আমার নাম জিজ্ঞেস করছিলেন কেন? কপট রাগত গলায় জিজ্ঞেস করে   অনসুয়া।

–আসলে আলাপ করতে ইচ্ছে হল তাই।

–ঠিক আছে কলেজ এসে গেছে আপনি যান।

–ওভাবে বললে যাবো না।

–কি ভাবে বলতে হবে?

–বলো এখন তুমি যাও।

এইভাবে শুরু অতীনের সঙ্গে সম্পর্ক।দ্বিধা দ্বন্দের দোল দোলায় কেমন জড়িয়ে পড়ে।একেই বলে বয়সের ধর্ম।নির্জনতায় পেলে বুক খামচে ধরতো।উন্মুক্ত কোমরে চাপ দিত। আপত্তি করতো আবার ভালও লাগতো।একদিন কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি হতে দুজনে একটা পার্কে একটু নির্জনতায় গিয়ে বসল।এদিক-ওদিক তাকিয়ে আচমকা একটা হাত জামার মধ্যে ঢূকিয়ে মাই টিপতে লাগল অতীন।

অনসুয়া আপত্তি করে,কি হচ্ছে কি,কেউ দেখবে।

–কে দেখবে?

–আর না আর না..তনু…।

অতীন হাত বের করে কোমরে শাড়ির বাধনের মধ্যে হাত ঢোকাতে গেল।অনসুয়া   বলে,ন-না তনু কি হচ্ছে কি-বলে হাত চেপে ধরে।

–প্লিজ অনু প্লিজ একবার শুধু হাত দেবো।জোর করতে থাকে অতীন।

–ন-না বলছি–।বলতে না বলতে গুদের বাল মুঠীতে চেপে ধরে অতীন।

–ঊঃ লাগছেএএএ..।হাত ধরে হ্যাচকা টান দিল অনসুয়া।

একগুচ্ছ বাল সমেত হাত বেরিয়ে এল।চোখে জল এসে গেল অনসুয়ার।উঠে দাঁড়িয়ে   বলে,জানোয়ার ইতর…।

অতীন দাত বের করে বলে,এ্যা তুমি খুব রেগে গেছো,আচ্ছা বাবা স্যরি।কা্ন মলছি–হলতো?

–ইতর কোথাকার।তোমার কান ছিড়ে দেবো..স্কাউণ্ড্রেল।দপদপিয়ে পার্ক থেকে বেরিয়ে   গেল অনসুয়া।

লোক আসা শুরু হয়েছে পার্কে অতীন আর বাধা দেবার চেষ্টা করে না। অনসুয়ার কি   রকম দাদা পুলিশ অফিসার কয়েকদিন তাকে কলেজ পৌছে দিয়েছে এবং অতীনের  খোজ নিয়েছে।অতীন আর ধারে কাছে ঘেষেনি,সময় নষ্ট না করে অন্য শিকারে মন দিয়েছে।এই লম্পটটাকে প্রেমিক ভেবেছিল মনে করে গ্লানি বোধ করে অনসুয়া।

সন্ধ্যে বেলা ঘুম ভেঙ্গে সুচিস্মিতা জিজ্ঞেস করে,তুমি ঘুমাও নি?

–না ঘুম আসছে না।তুমি শুয়ে থাকো ,আমি চা নিয়ে আসছি।চা আনতে ক্যাণ্টিনে চলে গেল অনসুয়া।

[৩৫]

সংরক্ষিত কামরা।সবাই ঘুমোবার আয়োজনে ব্যস্ত। সুচিস্মিতা জানলার ধারে হেলান দিয়ে বসে আছে। এমনিতে রাতে ট্রেনে ঘুম আসে না,একা মেয়ে ঘুমের ঘোরে কাপড় চোপড় সরে গেলে সবাই ড্যাবডেবিয়ে দেখবে ভেবে ঘুমের প্রশ্নই আসে না।জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে নিঝুম অন্ধকার।তার মাঝে নক্ষত্রের মত টিপ টিপ করে জ্বলছে আলো।ঘুমে অচেতন গ্রাম গুলো সরে সরে যাচ্ছে। কোথায় ছিল আজ কোথায় এসে পড়ল।এই স্কুলে পড়াবে কোনদিন ভেবেছিল? মনে পড়ল বড়দির কথা ডিএমসাহেবকে দেখে বিবাহিত মনে হয় নি।সত্যি কি বিয়ে করেন নি ভদ্রলোক? নীলাভ সেন কি তার পরিচিত সেই নীলু? নিজেকে ধমক দেয় কি হবে এসব ভেবে।নীলুর ইচ্ছে ছিল এম এ পাস করে অধ্যাপনা করবে।কোথায় আছে সে কে জানে?হয়তো কোনো কলেজে মাসীমণির মত লেকচার দিচ্ছে।  নীলাভ নামটা খুব সাধারণ ,একই নামের দুজন থাকা সম্ভব।নীলুকে একবার দেখার ইচ্ছে হয়।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে,ট্রেনের যান্ত্রিক শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাক ডাকছে কেউ কেউ। সামনে লোয়ার বার্থে লোকটা এমন ভাবে শুয়েছে লুঙ্গিটা না উঠে যায়। একবার বাথরুম যাওয়া দরকার। টাকা পয়সা হ্যাণ্ডব্যাগে ট্রলিতে কিছু জামা কাপড়।কাউকে দেখতে বলবে তার উপায় নেই।যে চোর সেও পড়ে আছে মটকা মেরে সুযোগের অপেক্ষায়।হ্যাণ্ড ব্যাগ হাতে নিয়ে,ট্রলিটা বসার জায়গায় তুলে রেখে এগিয়ে গেল বাথরুমের দিকে।

বাথরুমের দরজার কাছে পৌছে শুনতে পেল ভিতর থেকে অদ্ভুত শব্দ। কিসের শব্দ বোঝার জন্য কান খাড়া করে থাকে।হুউম–হুউম শব্দ।কেউ কি কিছু ভেঙ্গে নেবার চেষ্টা করছে নাত? আশ পাশে কোন চেকার বা পুলিশ কাউকে দেখছে না।দরজা ভিতর থেকে বন্ধ।নিজের জায়গায় ফিরে দেখল সিটের উপর পড়ে আছে ট্রলিটা।আবার বাথরুমের দিকে গেল।দরজা খুলে দুজন মহিলা   পুরুষ বেরিয়ে এল।মহিলাটি মাথা নীচু করে তাকে অতিক্রম করে চলে গেল।পুরুষটি চোখাচুখি হতে মৃদু হাসল। সুচিস্মিতার মুখ লাল হল একটু আগের কথা ভেবে।শরীর চনমন করে ওঠে।কথাবার্তা শুনে মনে হল ওরা স্বামী-স্ত্রী। তাহলেও এভাবে   বাথরুমের  সঙ্কীর্ণ পরিসরে ভেবে লজ্জায় লাল হয় সুচিস্মিতা।

বাথরুমে ঢুকতে গা ঘিনঘিন করে।কাপড় তুলে বসে করুণভাবে তাকিয়ে থাকে গুদের দিকে।গুদটাকে কি দুখী-দুখী মনে হচ্ছে? জল দিয়ে সযত্নে গুদ ধুয়ে হাত বুলিয়ে আদর করে।চোখ ছাপিয়ে জল আসে।কল খুলে চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে এল। ট্রলি তেমনি আছে নিজের জায়গায়।নামিয়ে সিটের নীচে ঢুকিয়ে দিল। জানলার কাঁচ নামিয়ে হেলান দিয়ে বসে চোখ বোজে।ট্রেনের চাকার যান্ত্রিক শব্দে একটা ছন্দ আছে।যেন বলছে,”পিছে নয় আগে   চলো…পিছে নয় আগে চলো।” না আর পিছন দিকের কথা ভাববে না সুচিস্মিতা। নীলু যেখানে আছে ভালো থাকুক। বিয়ে করে স্ত্রী পুত্র নিয়ে সুখে থাকুক। তার কোন দোষ নেই, তাকে না বলে কয়ে চলে এসেছে।পর জন্ম বলে কিছু আছে কি না জানা নেই যদি থাকে   তখন দেখা যাবে। মাসীমণি কত বছর বাদে আবার বিয়ে করে বেশ সুখে আছেন। হাবভাব চলন বলন সব বদলে গেছে।সুখী মানুষের মুখ দেখলেই বোঝা যায়।যদি অনির মত কেউ আসে জীবনে তাকে কি নীলের জায়গায় বসাতে পারবে সুচিস্মিতা?নীলের জায়গা মানে? সত্যিই কি তার হৃদয়ে কোনো জায়গা নীলের জন্য ছিল? সব গোলমাল হয়ে যায়।নিজেকে নিজেই চিনতে পারে না।

একদিন নীলের প্রতি যাতে কোনো অন্যায় না হয় সেজন্য বাড়ি ছেড়ে মাসীমণির কাছে যেতে রাজি হয়েছিল।আবার চোখে জল চলে আসে। কে যেন খ্যাস্ খেসে গলায় বলে, আপনি শোবেন নাই?

আঁচল দিয়ে চোখ মুছে তাকায়,একটি মহিলা মানে মহিলার মত পোষাক চেহারা পুরুষালি  তাকেই লক্ষ্য করে আবার বলে,আমি এখানে বসবো?

সুচিস্মিতা পা গুটিয়ে জায়গা করে দিল।সম্ভবত হিজরে হবে জায়গা খালি  পড়ে আছে বসলে কি হবে। একজন সঙ্গি পাওয়া গেল।

–কোথায় যাবেন?

সুচিস্মিতা বলে,বোলপুর।

–আমি কলকাত্তা যাবে।এখানে নাচের পোজ্ঞাম ছিল।শালা শেষে ঝামেলায় জড়িয়ে গেলম।

হিজরেদের ভাষা সাধারনের থেকে আলাদা।সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে তাকায় সুচিস্মিতা।

–আমি দরজায় দরজায় ছেলে নাচিয়ে বেড়াই না,ডান্স করি।অদ্ভুত চোখ টিপে বলে, কারো মনে ধরলে এক্সট্রা ইনকাম।এই জন্যই তো ফাসলাম পুলিশ রেড হল হাজতবাস। নসিব আচ্ছা শালা থানায় একজন বড় অফসার ছিল বড়িয়া দিল,তার মেহেরবানিতে সায়রা ছাড়া পেয়ে গেল।

এর নাম তাহলে সায়রা?এক্সট্রা ইনকামের কারণ বুঝতে অসুবিধে হয় না। অবাক লাগে এরা কিভাবে যৌন আনন্দ দেয়? কেমন এদের যৌনাঙ্গ কোন ধারণা নেই তার।পাশের লোয়ার বার্থের ভদ্রলোক চিত হয়েছে পা দুট ভাজ করা।যা আশঙ্কা   করেছিল, লুঙ্গি উঠে গেছে হাটু অবধি। লুঙ্গির ভিতরে গভীর অন্ধকার।ট্রেন যখন প্লাটফরম পার হচ্ছে জানলা দিয়ে আলো এসে পড়ে।স্বল্প আলোয় নজরে পড়ে কালো বালের মধ্যে  ইঞ্চি তিনেকের মত পুরুষাঙ্গ। নিরীহ নেতিয়ে আছে। সুচিস্মিতা মুখ ঘুরিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে তাকাল।

–এখানে বসেছি আপনার নাপসন্দ?

–না না আপনি বসুন।

–তাহলে মুখ ঘুরায়ে নিলেন,কথা বলছেন না।

–সারা বছর আপনার নাচের প্রোগ্রাম থাকে?

–শীত কালেই বেশি থাকে।

–অন্য সময় কি করেন?

–আপনি আউরত আপনার কাছে শরম নেই। ঘরে কাষ্টোমার আসে। আচ্ছা আচ্ছা মস্তান গুণ্ডা দেখলম আমাদের এইটার কাছে একেবারে গাণ্ডু বনে যায়। দেখেন বহিন, চুতকি নেশায় আদমি ভুত বনে যায়।

সুচিস্মিতার শরীর ঘিনঘিন করে উঠল।এ কেমন সহযাত্রী? বার্থের দিকে তাকিয়ে দেখে গভীর ঘুমে ডুবে আছে সব।হিজরেরাও শরীরের বিনিময় উপার্জন করে? অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করছে লজ্জায় জিজ্ঞেস করতে পারছে না। একটা লোক বার কয়েক ঘুরে গেল।মনে হল আড়াল থেকে সায়রাকে ইশারা করছে।সায়রা একটু ইতস্তত করে সুচিস্মিতার দিকে তাকায়।সায়রা বলে,মালুম হচ্ছে কাস্টোমার।

তারপর উঠে চলে গেল।দুজনে একটু পরে পিছন দিকে গেল।যাবার সময় সায়রা সুচিস্মিতার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চোখ টিপল।ভাল লাগে না সুচিস্মিতার,বুক ঢিপঢিপ করে।সে ছাড়া কামরায় কেউ জেগে নেই।মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কতলেও বিপদ।এমনভাবে চোখ টিপল যেন আমি ওর সমান কেউ। ট্রেনের হুইশল বাজছে ঘন ঘন।সম্ভবত ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে। সায়রা কোথায় গেল?কিভাবে ওরা যৌণ মিলন করে সেসব চিন্তা ছেড়ে নামার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।পারু মনে হয় এখন ঘুমে অচেতন।

ট্রেনের দরজায় পৌছে অবাক, এই ভোরে প্লাটফর্মে পুলিশে পুলিশ ছয়লাপ।সুচিস্মিতা বোঝার চেষ্টা করে কি ব্যাপার?কোনো গোলমাল হয়নি তো?একটা দিক পুলিশ কর্ডন করে রেখেছে যে কারণে যাত্রীসাধারণের যাতায়াতের পরিসর কিছুটা সংকীর্ন, ভীড় ঠেলে ধীরে ধীরে বহিঃপথের দিকে ট্রলি টানতে টানতে এগোতে থাকে।যেতে যেতে কানে এল নতুন ডিএম এসেছেন।মুহূর্তে ঝিলিক দিয়ে উঠল ডিএম সাহেব বদলির কথা বলছিলেন।একবার মুখটা দেখতে পেলে ভাল হতো কিন্তু যেভাবে কর্ডন করে রেখেছে  কাছে যাবার কথা ভাবা যায় না।সারা শরীর জড়িয়ে আছে ক্লান্তি।এইসব ভিআইপিদের জন্য সাধারন মানুষের ভোগান্তির একশেষ।

[৩৬]

নীলাঞ্জনার ঘুম ভেঙ্গে যায়।বুকের মধ্যে মুখ গুজে অনি।খাট থেকে নেমে নাইটি গায়ে   চাপিয়ে দেখে অনি গভীর ঘুমে অচেতন।আবছা আলো এসে পড়েছে অনির উলঙ্গ শরীরে। কাল রাতে অনেক পরিশ্রম করিয়েছে বেচারীকে দিয়ে।ঠেলেঠুলে কোমরে জড়িয়ে দিল   লুঙ্গিটা।মনে হল কলিং বেল বাজলো। কে এল এত সকালে?নীলাঞ্জনার কপালে ভাজ পড়ে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অবিন্যস্ত চুল ঠিক করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।দুধঅলা এত সকালে আসে না।ঘাড় ঘুরিয়ে দেওয়ালে ঘড়ির দিকে দেখল,চারটে বেজে দশ মিনিট। দরজা খুলে অবাক,একী সুচি তুই?

–ছুটি পড়ে গেল চলে এলাম।একগাল হেসে বলে সুচিস্মিতা।টুকুন কোথায়?

–টুকুন দিদির সঙ্গে ঘুমোচ্ছে।যতক্ষন ঘুমিয়ে থাকে শান্তি।

নীলাঞ্জনা দরজা বন্ধ করে চাপাকে ডাকতে গেলেন।চাপা জেগে বসে আছে।চা করার ফরমাস করে বলেন,কিরে রাতে ঘুমোস নি?

–কি করে ঘুম আসবে বলো?

ঠোটে ঠোট চেপে এক মুহুর্ত ভেবে নীলাঞ্জনা বলেন,কিছু না করলে খালি খালি ধরলো?

–বিশ্বাস করো মাওবাদী টাদী ও কিসসু জানে না।ফুপিয়ে কেদে ফেলে চাপা।

–আচ্ছা তুই চা কর,দেখি কি করা যায়।সুচি এসেছে।

সুচিস্মিতা দরজা ভেজিয়ে চেঞ্জ করতে থাকে।নীলাঞ্জনা বাইরে শব্দ করতে বলল,এসো।

নীলাঞ্জনা চিন্তিত মুখে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করেন,তুই কখন রওনা দিয়েছিস?

–কাল রাতে।ভোরবেলা এসে পৌছেছে ট্রেন।

–মুখ ধুয়ে নে,চাপা চা করছে।এদিকে হয়েছে এক ঝামেলা।চাপা কান্না কাটি শুরু করেছে।

–কেন?কি ঝামেলা?

–ওর ভাইকে পুলিশে ধরেছে।দেখি একজন উকিল-টুকিল ধরে কিছু করা যায় কি না?তুই একটু গড়িয়ে নে।

–পারু ওঠেনি?

–ও উঠবে এত সকালে?  পারুর আকাশে এখনো চাঁদ জ্বলজ্বল করছে।

অনির্বান ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে প্রস্তুত হতে থাকে।নীলাঞ্জনা জিজ্ঞেস করল,তুমি রেডি?

–আমি চা খেয়েই বেরবো।অনির্বান বললেন।

–আমিও যাবো তোমার সঙ্গে।নীলাঞ্জনা বলেন।

চাপা চা নিয়ে ঢুকলো।নীলাজনা জিজ্ঞেস করেন,তোমার ভাইয়ের নাম কি ?

–সুদাম মাহাতো।সাতপাচে থাকে না,পাটি-ফাটি কিছু বোঝেই না।

–ঠিক আছে আমরা যাচ্ছি।তুমি চিন্তা কোর না।সান্ত্বনা দিলেন নীলাঞ্জনা।

পারমিতার ঘুম ভেঙ্গে গেছে,বিছানা ছেড়ে ওঠেনি।বেরোবার আগে নীলাঞ্জনা পারুর ঘরে গিয়ে বললেন,আমরা বেরোচ্ছি।ভাই রইল দেখো।সুচি এসেছে।

–দিদিভাই এসেছে!কোথায়?তড়াক করে বিছানায় উঠে বসে।

–ঘূমোচ্ছে।এখন বিরক্ত কোর না।সারারাত জার্নি করে এসেছে।

ব্যাজার মুখে শুয়ে পড়ে পারমিতা।

অনির্বান ঢুকে বলল,গুড মর্নিং মিতা।

–মর্নিং।অনি তুমি যাচ্ছো না?

–আমরা দুজনেই যাচ্ছি।

ওরা বেরিয়ে যেতে ঘাড় উচু করে ঘড়ি দেখল।আটটা বেজে গেছে।পারমিতা বিছানা  ছেড়ে উঠে মনে মনে বলল,ঘুম বের করছি। গলা চড়িয়ে বলল, চাপামাসী চা দাও।

সুন্দর নাচছে দেবজয়া।চোখে মুখে আকুতি।আলোর রঙ বদলাচ্ছে।নীল আলোতে স্বপ্নিল পরিবেশ তৈরী হয়। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছে সুচি।

–সুচি তুমি এখানে?

পিছন ফিরে দেখল নীল।

–কত খুজেছি তোমায়।

— বানিয়ে বলার স্বভাব তোমার গেলনা,মিথ্যুক কোথাকার?

–বিশ্বাস কর চোখ ছুয়ে বলছি।নীলু এগিয়ে এসে কাধে হাত রাখে।তুমি আমার গায়ে হাত দেবে না, হাত সরাও।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিল।

পারমিতা অবাক হয়ে হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,দিদিভাই আমি।

সুচিস্মিতা চোখ মেলে তাকিয়ে পারুকে দেখে বলল,তুই এখানে?

–কিসব আবোল তাবোল বলছো?স্বপ্ন  দেখছিলে নাকি?

সুচিস্মিতা উঠে বসে বলল,নিজে সারারাত ঘুমিয়ে এখন আমাকে জ্বালাতে এলি?মাসীমণি কোথায়?

–অনি মামণি বেরিয়েছে,তোমাকে বলেনি?

–ও হ্যা চাপাদির ভাইকে পুলিশে ধরেছে।

মারমিতা গলা তুলে বলল,চাপামাসী চা জল খাবার হল?

সুচিস্মিতা চাদর সরিয়ে বসার জায়গা করতে পারমিতা বসে জিজ্ঞেস করে,গরমের ছুটি কতদিন?

–প্রায় মাস খানেক।

–কাকে স্বপ্ন দেখছিলে বলতো?পারুর মুখে দুষ্টু হাসি।

চাপা দুটো প্লেটে লুচি তরকারী নিয়ে এসে বলল,এখানে দেবো?

পারু হাত বাড়ীয়ে প্লেট দুটো নিয়ে বলল,দশ মিনিট পর চা দিও।

সুচি উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে ফিরে এসে বলল, ছুটির আগে স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হল।তোকে খুব মিস করছিলাম।

–তুমি গান গেয়েছো?

–মেয়েদের দিয়ে একটা নৃতনাট্য করিয়েছি।

–চণ্ডালিকা না নটির পুজো?

–আমি স্ক্রিপ্ট বানিয়েছি শবরীর প্রতিক্ষা।

–তুমি বানিয়েছো?

–হ্যা ব্যাগে আছে তোকে পড়াবো।তোর মতামত জানতে চাই।

–ওদের কেমন লেগেছে?

–বলল তো ভালোই।জানিস ডিএম এসেছিল।দেখতে দেখতে ওর নাকি চোখে জল এসে গেছিল।

–কই দেখি তোমার স্ক্রিপ্ট?

সুচি খাওয়া শেষ করে উঠে ব্যাগ থেকে স্ক্রিট বের করে পারুর হাতে দিল।সুচি জানে তার বোনটি  এমনিতে হালকা কথাবার্তা বললেও  ওর মধ্যে একটা চিন্তাশীল বিচক্ষন মন আছে।পারু স্ক্রিপ্ট নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চোখ বোলাতে থাকে।

সুচি অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করে পারু কি বলে?পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এক সময় গুম মেরে কি যেন ভাবে।পড়ছে কি পড়ছে না বোঝা যায় না।চাপা চা দিয়ে গেল।

চায়ে চুমুক দিয়ে সুচি জিজ্ঞেস করে, কিরে কি ভাবছিস?

–দিদিভাই তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

সুচি সন্ধিৎসু চোখে তাকায়।

–তুমি নীলদাকে এখনো ভুলতে পারোনি তাই না?

–ওখানে নীলুর নাম কোথায় পেলি?

–তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছো।

–ভুলব কেন?নীলু পাঞ্চালিদি বন্দনা শ্রীময়ি ধনেশ সুদীপ–।

–থাক আর বলতে হবে না। আমার উত্তর পেয়ে গেছি।দিদিভাই ওকে কোনোদিন দেখিনি ভবিষ্যতেও দেখব কিনা জানি না আস্তে আস্তে আমিও ওর প্রেমে পড়ে গেছি।

–পড়াচ্ছি,খুব ফাজিল হয়ে গেছিস? শোন পারু ছেলেটা খুব সাদাসিধে সরল স্কুলে ওর এই সিমপ্লিসিটি ভালো লেগেছিল।এরকম সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে।স্কুলে চেনা জানার মধ্যে তোর অনেকের মধ্যে একজনকে একটু আলাদা এরকম মনে হয়নি কখনো?

পারমিতা হাসল।এক মুহূর্ত ভেবে বলল,পড়তে ভালই লেগেছে।তোমার আরেকটি গুণ আবিষ্কার করলাম।এবার এটা কতটা বাস্তবায়িত করতে পেরেছে তোমার ছাত্রীরা সেটা তুমি বলতে পারবে।স্ক্রিপ্টের মধ্যে একটা মেলাঙ্কলি সুর মনকে আচ্ছন্ন করে।

ডিএমের নাম নীলাভ সেন পারুর কাছে চেপে গেল সুচি।ওকে বললে আবার এই নিয়ে ঠাট্টা তামাশা শুরু করে দেবে।

টুকুন ঘুম থেকে উঠে সুচির কোলে উঠে বসেছে।সুচি জিজ্ঞেস করল কেমন আছো?

— বালো।তুমি বালো আছো?

যাক বেলা হল স্নানে যেতে হবে।স্নান করলে শরীর ঝরঝরে হবে।সুচি জিজ্ঞেস করে,কিরে তুই যাবে না আমি যাবো?

–তুমিই যাও ধকল করে এসেছো।স্নান করলে ফ্রেশ লাগবে।এসো আমার কাছে এসো।হাত বাড়িয়ে টুকুনকে নিল পারু।

তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো।পারুকে অনেক কথা বলেনি ওকে বলেই বা কি হবে?চকিতে একটা চিন্তা মনে ঝিলিক দিয়ে গেল।একদিন এখানকার ডিএম অফিসে গেলে কেমন হয়?অন্তত ব্যাপারটা কনফার্ম হওয়া যেতো।নীলুই ডিএম কিনা আর এই ডিএম বিয়ে করেছে কিনা?বড়দি বলছিল বিয়ের পর ছেলেদের আচরণ যেমন হয় এর নাকি সেরকম নয়।ঠোটে এক চিলতে হাসি খেলে যায়।

পার্টি অফিসের সামনে জিপ এসে দাড়াতে  কমরেড জেপি জিপ থেকে নেমে পার্টি অফিসে ঢুকে চেয়ারে বসলেন।সবাই চুপচাপ দাদা কি বলেন শোনার জন্য।

–বরেন ডিএমের সঙ্গে এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট হয়েছে?

–হ্যা সিকদারবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।

–ডিএমের বয়স বেশী না বিয়ে করেনি।ভাগ্যিস জানতে পেরেছি।জামদানী শাড়ি কিনে বসে আছি।ডিএম কি শাড়ী পরবে?

সবাই জেপির রসিকতায় হো-হো করে হেসে উঠল।

— কটায় এ্যাপয়ণ্টমেণ্ট কিছু বলেছে?

–ভিজিটং আউয়ারসে যেতে হবে।দশটা থেকে এগারোটা।

ডিএমকে  দেবার জন্য উপহার সামগ্রীর মধ্যে থেকে শাড়ীটা সরিয়ে রাখা হল জেপির নির্দেশে।জেলায় কোনো ডিএম এলে পার্টির পক্ষ হতে উপহার দেওয়া রেওয়াজ চলে আসছে।

স্নান করে সবাই অপেক্ষা করছে।টুকুনকে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে মাসীমণী এলে খাবে বলে বসে আছে সুচি।চাপারানি হাসদা রান্না ঘরে বসে ভাবছে ভাইয়ের কথা। দিদিমনির ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে।

নীলাঞ্জনা ফিরলেন তখন প্রায় একটা বাজে।পারু জিজ্ঞেস করে,ছেড়েছে?

–তোর অনুকে জিজ্ঞেস কর।কোথা থেকে একটা ঘাটের মড়া উকিল ধরে এনেছে ভাল করে কথা বলতেই পারে না।

–আমি এইসব করেছি নাকি কখনো?অনির্বান বলল।

–কি হয়েছে বলবে তো?চাপাদি অস্থির হয়ে বসে আছে।

অনির্বান ব্যাপারটা বিশদে বলে,পুলিশ ভ্যানে আসামীদের নামাতে দেখল ওর মধ্যে সুদাম নেই।খোজ নিতে জানাল থানায় খোজ নিতে।গেলাম থানায় সেখানে ওসি গৌরাঙ্গবাবু বললেন,আসামীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।জিজ্ঞেস করলাম ধরলেন কেন আবার ছেড়েই বা দিলেন কেন?ভদ্রলোক রেগে গিয়ে বলল,আপনি  কে?

ঝামেলার ভয়ে কথা বাড়ালাম না। থানা থেকে বেরোতে এক কনেস্টবল বলল,নয়া ডিএম এসছিল থানায়।খুব বকাবকি করেছে।ব্যাস তারপর সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে।

ঝুটমুট ধরেছিল।

যাক ছাড়া পেয়েছে চাপা আড়াল থেকে সব শুনছিল,জিজ্ঞেস করল,দিদিমণি এবার খেতে দিই।

–কিরে তোরা খাসনি?তোরা তো খেয়ে নিতে পারতিস।

সবাই একসঙ্গে খেতে বসে যায়।সুচি খেতে খেতে বড়দির কথাটা ভাবে,এমন হৃদয়বান মানুষ মিথ্যে বলতে পারেনা।নিজের উপর ভীষণ রাগ হয়।যখন নামটা শুনলো তখন বেরিয়ে কেন ভালোভাবে দেখল না ওটা নীলু নাকি অন্য কেউ?

[৩৭]

রাতে শুয়ে শুয়ে সুচিস্মিতা ভাবছে একটা ফয়শলা হওয়া দরকার।বিষয়টা কিছুতেই মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না।  একটা হেস্তনেস্ত করে একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে।ভাল মন্দ যাহাই ঘটুক সত্যরে লও সহজে।মনে পড়ল কবির বানী। স্কুলের দিদিমনি পরিচয় দিয়ে আলাপ করা যেতে পারে।শবরীর প্রতিক্ষা সম্পর্কে মতামত জানতে চাইবে।বিরক্ত হলে চলে আসবে।

পারমিতা পাশে শুয়ে উসখুস করে।মালদা থেকে ফেরার পর থেকে দিদিভাইয়ের একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।বয়সে ছোটো হলেও দিদিভাইয়ের সঙ্গে তার বন্ধুতের সম্পর্ক।কোনো কিছুই গোপন করে না এবার মনে হল কিছু একটা চেপে যাচ্ছে।পাশ ফিরে একটা হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে সুচিকে।

–কি হল পারু ঘুমোস নি?

–দিদিভাই তোমার মত অত পড়াশুনা করিনি ঠিক কিন্তু আমাকে বোকা ভেবোনা।

সুচি পাশ ফিরে পারুকে জড়িয়ে ধরে বলল,আমার আদুরে বোনটাকে আমি বোকা ভাবতে পারি।

–এই সব বলে তুমি সব তালগোল পালিয়ে দিচ্ছো।

সুচি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,আমারই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।

–সেইজন্যই তো বলছি আমাকে সব খুলে বলো তাহলে তোমার মনের বোঝা কিছুটা হলেও হালকা হবে।

সুচি স্কুলের সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলল।পারমিতা কিছুক্ষন চুপচাপ তারপর বলল,তুমি শিক্ষিকা তোমার উচিত ছিল কাছে গিয়ে আলাপ করা।

–তখন তো বুঝিনি অত তাড়াতাড়ি চলে যাবে।

–তুমি বলছো নীলদা এখানে এসেছে?

–আমি কখন বললাম?

–যাইহোক ঐ ডিএম এখানে এসেছে।শোনো দিদিভাই কালই চলো–।

–মাসীমণি থাকবে না তুই গেলে টুকুনকে কে দেখবে?আমি একাই যাব।

–ঠিক আছে।সরাসরি কথা বলো।যদি দেখ সত্যি সত্যি  বিয়ে করেছে তাহলে কথা বলে বিব্রত করার মানে হয়না।

–সবে এল কটা দিন যাক।

–না না দিদিভাই আমার কথা শোনো তুমি কালই যাবে।

সকাল হতে ব্যস্ততা শুরু হয়।স্নান করে অনির্বান নীলাঞ্জনা খেতে বসে গেল।দুজনকেই কলেজ যেতে হবে।এখনো গরমের ছুটি পড়েনি।টুকুন বসেছে মায়ের সঙ্গে।নীলাঞ্জনা  বললেন,দিদিভাইকে পেয়ে আড্ডা দিতে বসে যেওনা।খেয়ে দেয়ে যা করার কোরো।

পারু সুচির দিকে তাকিয়ে হাসল।

মাসীমণি বেরোবার পর সুচি বলল,পারু আমি আসি।

–শোনো দিদিভাই প্রথমে কনফার্ম হবে বিয়ে করেছে কিনা।আর বিয়ে করলেও আপসেট হবে না।বড়মাসী বলল,মেশোর বন্ধুর ছেলে ডাক্তার–।

–ভাগ তুই কি মনে করিস তোর দিদিভাই এত ঠুনকো?

পারু খিল খিল করে হেসে বলল,অল দা বেস্ট।

রিক্সাওলাকে বলতে বোঝা গেল ভালই চেনে।তিরিশ টাকা ভাড়।সুচি রিক্সায় উঠতে রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে রিক্সাওলা বলল,এই বাবুটা নতুন এসেছে।

–উনি কেমন লোক?

–লোক খারাপ না।কিন্তু অফিসের লোকজন তার কাছে ঘেঁষতে দেয় না।কাছে যেতি না পারলে মানুষ কি করে তার কথা বলবে বলেন?

বাংলোর কাছে নেমে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে সুচিস্মিতা। গেটে সশস্ত্র পুলিশ দাঁড়িয়ে বাঙালি বলে মনে হয় না।তাহলে কি ফিরে যাবে? একটা বছর পাঁ-ছয়ের বাচ্চা এসে দিব্য হাত ধরে জিজ্ঞেস করে,তুমি কে বতে?

–আমি সুচিস্মিতা।তোমার নাম কি?

–কুনটো বলবো?মা বলে সোনু সাহেব বলে,সাহেব।

–তুমি এখানে কোথায় থাকো?

–আমি এখানেই থাকি বতে।লতুন আসছি।

সুচিস্মিতার মনে হল এই বোধ হয় ডিএমের ছেলে।জিজ্ঞেস করে,সাহেব কোথায়?

–ঘরে শুয়ে আছে শরীল ভাল নাই বতে।তুমি দেখবে?

সুচিস্মিতার মনে হল সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না।তোমার সাহেব রাগ করবে না?

–উঃ রাগ করলে দেখাই দিবো।ছেলেটি হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল।দুর থেকে সিপাইরা দেখছে। বয়সের তুলনায় ছেলেটা বেশ চটপটে।শ্যামলা রঙ নাদুস নুদুস চেহারা,আদর করতে ইচ্ছে হয়।আগে জানলে টফি কিম্বা ক্যাডবেরি কিছু একটা হাতে করে আনা যেতো।

একজন মহিলা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,সোনু কুথা যাচ্ছিস?

–সাহেবের কাছে লিয়ে যাচ্ছি।

–সাহেবের শরীর ভাল নাই,তু দাড়া কেনে।

মহিলা ঘরে ঢুকে বেরিয়ে এসে বলল,সাহেব অফিসে যাচ্ছে আপনে অফিসে যান কেনে।

–সাহেবের স্ত্রী নেই?

মহিলা হেসে ফেলল।সাহেব বিহাই করে নাই বটে ইস্তিরি কুথা থিক্যে আইসবে?

সুচিস্মিতা আশ্বস্থ হয়।মনে হচ্ছে এই নীলু হবে।একতলায় অফিস,সুচিস্মিতা নীচে নেমে এল।অফিসের সামনে একটা টাটাসুমো দাঁড়িয়ে, আশে পাশে বেশ কিছু ছেলে ছোকরা দাঁড়িয়ে গুলতানি করছে।

একজন সিপাহী এগিয়ে জিজ্ঞেস করে,কাউকে খুজছেন?

–ডিএমের সঙ্গে দেখা করব।

সুচিস্মিতাকে নিয়ে সিকদারবাবুর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল। সিকাদারবাবু জিজ্ঞেস করেন,কি ব্যাপার?

–ডিএমের সঙ্গে দেখা করতে চাই।

–আজ পার্টির লোকজন এসেছে।একটু ইতস্তত করে একটা স্লিপ এগিয়ে দিয়ে বলল,ডিটেলস লিখে দিয়ে ভিজিটরস রুমে বসুন।

সুচিস্মিতা লিখল,বিষয় ব্যক্তিগত।নাম সুচিস্মিতা বোস,পলাশডাঙ্গা।কিভেবে বোসের পর লিখল সেন।

সিকদারবাবুকে স্লিপ দিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বললেন,মিসেস সেন পলাশডাঙ্গা থেকে এসেছেন?

–আমার বাড়ী পলাশডাঙ্গা এখন এখানে লায়েকবাজারে থাকি।

–ঠিক আছে বসুন।সাহেবের শরীরটা ভাল নেই তার উপর পার্টির লোকজন-।

সুচি ভিজিটরস রুমে দেখল আগে থেকেই জনা সাত-আট জন বিরক্তিকর মুখে বসে আছে। সুচিস্মিতা বসে অপেক্ষা করে। মনে হাসে একসময় যে নীলু তাকে খুশি করার জন্য ব্যস্ত থাকতো আজ তার সঙ্গে দেখা করার জন্য হত্যে দিয়ে বসে আছে।

হঠাৎ সাহেবের ঘর থেকে মোটা মত লোক উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে এল।পিছনে কয়েকজন হাতে কিছু মালপত্র।মোটা লোকটি বলল,সহজ পথে চলে এ্যাই এগুলো গাড়ীতে তোল।শালা জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ।ওরা বেরিয়ে যেতে সিকদারবাবু এসে বললেন,স্যারের শরীর ভালো নয়।আপনার কাল আসুন।

–এতক্ষন ধরে বসে আছি আবার কাল–।

–আমি সব শ্লিপ রেখে দিচ্ছি।আপনাদের আগে ডাকা হবে।

সুচির মাথা ঝম ঝিম করে উঠল,জিজ্ঞেস করে আপনি আমার শ্লিপটা দেখি্যেছিলেন?

–সব দেখিয়েছি।আমি কি মিথ্যে বলছি?আসলে ওরা কিছু উপহার নিয়ে এসেছিল স্যার নিতে রাজী হন নি।এই নিয়ে গোলমাল।

–বুঝলাম তাতে আমাদের অপরাধ কি?

–ম্যাডাম ঘড়ি দেখেছেন?ভিজিটিং আউয়ারস কটা অবধি?

সুচিস্মিতা টলতে টলতে রিক্সায় উঠল। সে কেন সুচিস্মিতা বোস সেন লিখতে গেল?

রিক্সায় উঠে রুমাল বের করে চোখ মুছলো।একসময় নীলু বাড়ীর নীচে ঘোরাঘুরি করত এক পলক দেখা পাওয়ার জন্য।কত বদলে দেয় মানুষকে ক্ষমতা।অথচ সে নীলুকে কত উচ্চ আসনে বসিয়েছিল। পারুকে কি বলবে সে? লজ্জায় গ্লানিতে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। পলাশডাঙ্গা দেখেও চিনতে পারেনি কি করে বিশ্বাস করবে।

চাপা দরজা খুলে দিল।সুচি জিজ্ঞেস করে,পারু কই?

–ভাইরে ঘুম পাড়ায়।

চেঞ্জ করে বাথরুমে ঢুকলো। বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার খুলে দিয়েও স্বস্তি হয়না।সারা শরীরে যেন ক্লেদ জড়িয়ে আছে।নিজেকে ভীষণ ছোট মনে হচ্ছে।শাওয়ারে জল আর চোখের জল একাকার।একবার মনে হয় ভদ্রলোক নীলু নাও তো হতে পারে।হলেও অনেক বদলে গেছে নীলু।

–দিদিভাই ফিরেছে?তাহলে ভাত দাও।

পারুর গলা পেয়ে সুচি নিজেকে প্রস্তুত করে।ওকে কিছু বুঝতে দেবে না।একটাই ভুল করেছে আগ বাড়িয়ে কেন নামের পরে সেন লিখতে গেল?স্নানের পর এখন ভাল লাগছে।নীলুর সঙ্গে তার এমন কি সম্পর্ক ছিল?তবে একবার দেখা করতে পারতো।পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে আমরা কি খুশি হইনা।

দুজনে খেতে বসেছে।সুচি জিজ্ঞেস করে,টুকুন ঘুমিয়েছে?

–হুউম।পারমিতা বুঝতে পারে কিছু হয়েছে।দিদিভাইকে একটু সময় দিতে হবে।

পারমিতা লক্ষ্য করে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করছে দিদিভাই।উঠে কাছে গিয়ে বলে,এই অবেলায় খেতে ইচ্ছে না করলে খেও না।

পাশ ফিরে দেখে পারমিতাকে দেখে বুকের মধ্যে কান্না উথলে ওঠে। এই মেয়েটা তাকে একটু বোঝে।

–কি হয়েছে দিদিভাই?নীলু কি ম্যারেড? মমতা ভরা গলায় বলে পারমিতা।

সুচিস্মিতা ভাত রেখে উঠে দাড়ায়।বেসিনে হাত ধুয়ে বলল,কতদিন বাপি মাম্মীকে দেখিনি।ভাবছি পলাশডাঙ্গা হতে ঘুরে আসব।

–মামণি তো বলেছে কলেজে ছুটি পড়লে বড়দিভাইয়ের বাড়ী যাবে।

–আজকের কথা মাসীমণিকে কিছু বলিস না।

–স্কুলে বড়দি বলেছিলেন লেখালিখি করার কথা।লেখালিখি করলে হয়তো মনটা হালকা হবে।

–আমিও বলছি তোমার লেখার হাত খুব ভাল।গরমের ছুটিটা একটা কিছু লেখো।

সারা দুপুর দু-বোনের মধ্যে অনেক কথা হয়।সব কথা পরিষ্কার করে না বললেও পারমিতার মনে হয় কোথাও একটা গ্যাপ থেকে যাচ্ছে।এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে।

ঘুম ভাঙ্গে চাপার ডাকে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চা খেতে ওরা তৈরী হয়।বিকেলে ওরা হাটতে বের হয়।টুকুনও উঠে পড়ে।

–দেখেছো ওকে কেউ ডাকেনি ঠিক উঠে পড়েছে।পারমিতা বলল।

–আঃ পারু ওকে তো কোলে নিতে হয়না,তুই ওরকম করিস কেন?

–কোলে নিতে হয়না কিন্তু ওর জন্য জোরে হাটতে পারি না।

চওড়া রাস্তা যান বাহন বলতে অটো রিক্সা মাঝে মাঝে কিছু প্রাইভেট কার।রাস্তার দু-পাশে বিস্তীর্ণ ফাকা  জমিন।অঞ্চলটা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।হাটার পক্ষে প্রশস্ত।

তারাপীঠকে পিছনে রেখে দক্ষিন দিকে সোজা গেলে শান্তি নিকেতন।সুচি বলল, একদিন শান্তি নিকেতন যাবার খুব ইচ্ছে।

[৩৮]

ঝামেলা মিটলো মনে হয়না বরং শুরু হল।কমরেড জেপি সহজে ছাড়ার পাত্র নয়।সিকদারবাবুর হয়েছে সসেমিরা অবস্থা।একদিকে স্যার অন্যদিকে পার্টি।অল্প বয়স বিয়েথা করেন নি ইস্পাতের মত টানটান মেজাজ।স্যরের কথায় যুক্তি আছে সরকারী কাজ করেন তিনি কেন অন্যের দেওয়া উপহার নেবেন।মুষ্কিল হচ্ছে সব কিছু কি যুক্তি মেনে হচ্ছে।মুখে সবাই ন্যায় নীতির কথা বলে কিন্তু সুযোগ পেলে কেউ ছাড়ে না।যে মানুষের জন্য করবে সেই সময়কালে তাকেও তুমি পাশে পাবে না।

ঝামেলার পর স্যার একটা মিটিং-এ গেছেন।সঙ্গে রতন সিং আছে চিন্তা নেই। অফিস ছুটি হয়ে গেছে। সিকদারবাবু যাই-যাই করছেন। বাইরে গাড়ীর শব্দ হল মনে হয় স্যার ফিরলেন।

ডিএম সাহেব ঢুকে বললেন,আপনি  এখনো যান নি?

–এবার যাবো স্যার।কি দেখলেন?

–সিকদারবাবু স্থানীয় থানার ওসি মনে হল ইনভলবড।কাকে কি বলবো।হঠাৎ টেবিলে রাখা চিরকূটে নজর পড়তে তুলে চোখে সামনে মেলে ধরে জিজ্ঞেস করে,এগুলো কি?

–ভিজিটরস শ্লিপ।আজ তো হল না ওদের  সবাইকে কাল আসতে বলেছি।

ওদের প্রথম সুযোগ দেওয়া হবে।শ্লিপগুলো রেখে দিয়েছি।

একটা শ্লিপ তুলে চোখের সামনে ধরতে মাথা ঝিনঝিন করে উঠল।মিসেস সুচিস্মিতা বোসসেন,পলাশ ডাঙ্গা।

–এটা তো আমাকে দেখান নি।

–কি করব আপনি বললেন,আজ কারো সঙ্গে দেখা করবেন না।

নীলাভ সেনের মনে পড়ে পাঞ্চালি বলেছিল বীরভুমে মাসীর বাড়ী।হে ভগবান দরজায় এসে ফিরে গেছে সুচি?বিয়ে হয়ে গেছে।

–কি হল স্যার শরীর খারাপ লাগছে?সিকদার বাবু জিজ্ঞেস করেন।

–কোথায় থাকে কিছু বলেছে?

— হ্যা বলেছিলেন ও হ্যা লায়েকপুর।স্যার উনি কি আপনার পরিচিত?

–কি করে জানবো কে এসেছিলেন।আমি আসছি।আপনি অফিস বন্ধ করতে বলুন।

নীলাভ সেন উপরে উঠে আসতে জমিলাবিবি জিজ্ঞেস করে,সাহেব দুপুরে আপনি তো কিছু খাইলেন না?

–রাতে খাবো।

–আপনের শরিল খারাপ?

–না না তেমন কিছু না।

পোশাক বদলে বিছানায় এলিয়ে দিলেন শরীর।সুচি এসেছিল অথচ তার সঙ্গে দেখাই হল না।কিশোর বেলায় হারিয়ে যান।স্কুল জীবনে এককথায় প্রকাশ পড়েছিলেন। পবিত্র হাসি যে নারীর—সুচিস্মিতা।শিশির সিক্ত পদ্মের মত তরতাজা পবিত্র মনে হত সুচিস্মিতাকে। সুচি ছিল তার কাছে দূর আকাশে চাঁদের মত।তার সংস্পর্শে চাঁদের জ্যোৎস্নার মত মনের গ্লানি বেদনার অন্ধকার দূর হয়ে যেত।সুচির বিয়ে হয়ে গেল সে জানতেই পারল না।অবশ্য কি করেই বা জানাবে।পাঞ্চালিদির বিয়েতে যেতে পারেনি বাবার মৃত্যুর জন্য।সুচি তাকে জানাবে কিভাবে সেতো পলাশডাঙ্গায় ছেড়ে চলে এসেছে।মি সেন ভদ্রলোক কি করেন সুচির সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞেস করা যেতো।ব্যারিষ্টার বোস মেয়ের বিয়ে অবশ্যই যোগ্য পাত্র দেখেই দিয়েছেন। সুচি তাকে ভালবাসে পাঞ্চালিদি বলেছিল।আমাকে টিফিন দিতো তাই হয়তো এমন মনে হয়েছিল।আমার সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে পাঞ্চালিদি তেড়ে যেতো তাহলে তো বলতে হয় পাঞ্চালিদিও আমাকে ভালোবাসত।এই জেলায় নতুন কোথায় লায়েক বাজার কোথায় কি তার ভালো জানা নেই।রতন সিং হয়তো চিনতে পারে।লায়েক বাজারে সবাই কি সুচিকে চিনবে?অবশ্য মি.সেনের পুরো নাম জানলে হয়তো চেষ্টা করা যেতো।ডাক্তার বা ঐ জাতীয় কিছু হলে খুজে পাওয়া কঠিন হতো না।সিকদারবাবু সবাইকে কাল আসতে বলেছেন।দেখা যাক কাল যদি আসে।সিকদারবাবুকে বলে রাখতে হবে এলে অফিসে নয় যেন বাসায় পাঠিয়ে দেয়।সুচির সেই নীলু এখন ডিএম সুচি জানে তো?না জানলে খুব অবাক হয়ে যাবে ভেবে নীলাভ সেন বেশ মজা পান।

পারমিতারা ফেরার কিছুক্ষন পর নীলাঞ্জনা ফিরলেন একা।পারু জিজ্ঞেস করল,কি ব্যাপার তুমি একা, অনি কই?

–টিকিট কাটতে পাঠিয়েছি।

–টিকিট মানে পলাশডাঙ্গা?কবে যাচ্ছি আমরা মামণি?

–দেখি কবেকার টিকিট পায়।রিজার্ভেশন না করে অতদূর যাওয়া সম্ভব নয়।

–দারুন একটা সারপ্রাইজ হবে।পারুর গলায় উচ্ছ্বাস।

–বড়দিভাই আমার উপর রেগে আছে।অবশ্য ওর রাগ স্থায়ী নয় আমাকে দেখলেই খুশিই হবে।উদাস গলায় বলেন নীলাঞ্জনা,বরাবর আমার উপর খবরদারি করত আবার ভালোও বাসতো।একটু অলস আমার চেয়েও লেখাপড়ায় ভালো ছিল কিন্তু কোনোদিন চাকরির কথা ভাবে নি।

পারমিতা অবাক হয়ে শোনে মামণির কথা।কিশোরবেলার কথা বলতে গিয়ে মামণি হারিয়ে যায় অন্য জগতে।

অফিস যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন নীলাভ সেন।জমিলাবিবি এসে জিজ্ঞেস করে,সাহেব আপনের শরীর ভাল তো?অফিস যাচ্ছেন?

–এখন ভাল আছি।নীচে অফিসে গিয়ে বসি।বাইরে যাবো না।তোমার ছেলে কই?

–মোটে পড়াশুনা করে না।অখন পড়তেছে।

নীলাভ সেন নীচে নেমে নিজের ঘরে বসলেন।টেবিলের উপর এক গুচ্ছের ফাইল জমে আছে।বড়বাবু ছুটে এলেন,স্যর আপনার শরীর ভাল আছে?

–শরীরকে বেশি প্রশ্রয় দিতে নেই তা হলে পেয়ে বসবে।আচ্ছা বড়বাবু লায়েক বাজার অঞ্চলটা কেমন?

–মিশ্র অঞ্চল সব রকম মানূষ আছে সেখানে।দু-আড়াই হাজার মানুষের বাস।একটা গভঃ কমপ্লেক্স আছে। কেন স্যর?

–নতুন এসেছি ভাল করে জেলাটাকে চেনা হয়নি।ভাবছি জেলা সফরে বের হবো একদিন।

–হ্যা স্যার তাহলে ভাল হয়।আপনি না চিনলে কি হবে আপনাকে এর মধ্যে সবাই চেনে।

নীলাভ সেনের মুখে হাসি ফোটে,চোখ তুলে বড়বাবুর দিকে তাকালেন। বড়বাবু বললেন,না মানে আপনাকে সবাই সৎ অফিসার বলেই মনে করে।

কলেজে যাবার জন্য বেরোবে এমন সময় একটা তাগড়া যোয়ান হঠাৎ এসে  নীলাঞ্জনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে।কিছু বোঝার আগেই চাপা বেরিয়ে এসে বলল,আমার ভাই সুদাম।

সবাই বিস্ময়ে হতবাক।পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।

–আমাদের সবাইকে থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছে।এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস স্পর্শ করে যায় সবাইকে।

–দিদিমণি অরা বুঝায়ে বলেন তো ঐসব রাজনীতির ধারে কাছে যেনি না যায়।চাপা বলল।

নীলাঞ্জনা হেসে বললেন,এখন বেরোচ্ছি আরেকদিন এসো কেমন।গল্প করা যাবে, চাপা ওকে কিছু খেতে দাও।

অফিস ছুটি হয়ে গেছে।বড়বাবু ছাড়া সবাই চলে গেছে।নিজের ঘরে একনাগাড়ে কাজ করতে করতে নীলাভ সেন চেয়ারে হেলান দিয়ে ক্লান্তিতে চোখ বুঝলেন। এখানে আসার আগে সুন্দর অভিজ্ঞতা কমলাবাড়ি স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একটি নৃত্যনাট্য ‘শবরীর প্রতীক্ষা’ মন ছুয়ে গেছিল।যদিও শেষটা দেখা হয়নি একটা বেদনা করুণ স্ম্রৃতির রেশ নিয়ে তাকে চলে আসতে হয়েছিল। স্কুলে কলা চর্চা আগের মত আর দেখা যায় না। কালচার ছাড়া বিদ্যেকে মনে হয় অসম্পুর্ণ। রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’ র এক জায়গায় উপমা দিয়েছেন, বিদ্যে হচ্ছে কমল হীরের ওজন তার দ্যুতি হচ্ছে কালচার।’ নজরে পড়ে বড়বাবু নিত্যানন্দ সিকদার উসখুস করছেন।তার জন্য যেতে পারছেন না। লজ্জা পেলেন নীলাভ সেন।ডাকলেন,সিকদারবাবু।

–বলুন স্যর?

–আপনাকে অনর্থক আটকে রাখলাম।আপনি যেতে পারেন।

–না না তা নয় আমার কোন তাড়া নেই স্যর।

–তাহলে বসুন।আচ্ছা আপনি শান্তি নিকেতনে গেছেন?

–কি যে বলেন অনেকবার গেছি।খুব সুন্দর জায়গা সত্যিই চমৎ কার পরিবেশ গেলে মন ভরে যায়।

–এতদিন এখানে এসেছি আমার শান্তি নিকেতন যাওয়া হয়নি। ভাবছি একদিন যাবো।

–ঠিক আছে স্যার আমি কালই খবর পাঠাচ্ছি।বড়বাবু বলেন।

–না না একজন সাধারণ পর্যটকের মত যেতে চাই,অফিসিয়াল ফর্মালিটির দরকার নেই।

সবাই মিলে বড়মাসীর বাড়ী যাবার দিন ঠিক হয়েছে।গোছগাছ চলছে। পারমিতা লক্ষ্য করেছে বেশ কদিন ধরে দিদিভাই অনেক রাত অবধি কি যেন লেখে।রোজ বিকেলে   বেড়াতে বের হয় তিনভাই বোন। রোদ পড়ে এসেছে সুচির ওঠার নাম নেই পারমিতা তাগাদা দিল,কি দিদিভাই আজ বেরোবে না?

–হ্যা আমি তো রেডি।

–রেডি না ছাই।এত গভীর মনযোগ দিয়ে কি লেখো বলতো?

সুচিস্মিতা কিছু বলে না মুচকি হাসে। সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে,ওরা হাটতে বেরিয়েছে।টুকুন নিজের মনে চলে যাচ্ছে অনেকটা দূর আবার ছুটতে ছুটতে ফিরে আসছে   দিদিভাইদের কাছে। সুচিস্মিতা খেয়াল করে পারু গম্ভীর কোন কথা বলছে না। ছটফটে মেয়েটাকে এমন শান্ত দেখতে ভাল লাগে না।

–পারু তুই আমার উপর রাগ করেছিস?সুচিস্মিতা জিজ্ঞেস করে।

–আমার রাগ করতে বয়ে গেছে।দিদিভাই তোমায় একটা কথা বলি,তুমি অনেক বদলে গেছো।

সুচিস্মিতা বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে,নারে আমি মোটেই বদলাই নি।আসলে বয়স হচ্ছে না? আমার বয়সী হলে তুইও এরকম বদলাবি।

–সবাই আস্তে আস্তে বদলে যায়–তাই না?পারমিতা যেন অনেক দূর থেকে বলছে।আগে তুমি আমাকে কত কথা বলতে এখন সব কথা তোমার ফুরিয়ে গেছে।

–ও বুঝেছি আমার বোনটির মনে কেন এত অভিমান?পারু গোপন করার মত কোন কথা নেই আমার।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবন সম্পর্কে ধারণাগুলো বদলে বদলে যাচ্ছে।নতুন নতুন প্রশ্ন সামনে এসে দাড়াচ্ছে। সেসব নিয়ে লিখছিলাম।একটা নারীর জীবনে   পুরুষের উপস্থিতি কি অনিবার্য?পুরুষ ব্যতিরেকে একটি নারী কি অসম্পুর্ণ? এইরকম নানা বিষয় নিয়ে পড়াশুনা–।

–থাক-থাক আর বলতে হবে না।পারমিতা বাধা দিল।দিদিভাই কিছু মনে কোর না তুমি কিন্তু অযথা সহজ ব্যাপারকে জটিল করে তুলছো।নীলাভ সেনকে আমি দেখিনি চিনি না।তুমি সমগ্র বিষয়টা নিজের চোখ দিয়ে বিচার করছো নিজের কল্পনায় গড়া ছাচের সঙ্গে মেলাতে চাইছো তুমি উপেক্ষা করছো তার নিজস্বতাকে ভদ্রলোকের দিক দিয়ে ভাবলে হয়তো–।

–পারু এর মধ্যে নীলুর কথা আসছে কেন?আমি তো একবারও ঐ নাম উচ্চারণ করিনি। হ্যা একসময় আমার সহপাঠী ছিল আরও অনেকে ছিল অস্বীকার করি না। তুই বরং গুলিয়ে ফেলছিস।

–সহপাঠি ছিল–ব্যস?শোনো দিদিভাই তুমি আমার থেকে বড় অনেক তোমার পড়াশুনা তাহলেও বলি,তুমি চোখ বুজলে আমাকে দেখতে পাবে না ঠিক কথা কিন্তু মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে কি?

–চুপ কর।যত আজেবাজে কথা।সুচিস্মিতা বিরক্ত হয়।

তুকুন হা-করে দুই দিদির কথা শোনে।

নীলাঞ্জনা চিত হয়ে শুয়ে বই পড়ছেন। অনির্বান পাশে বসে ধীরে ধীরে কাপড়টা নীলাদির কোমর অবধি তুলে দিয়ে মুগ্ধ হয়ে যোণীর দিকে তাকিয়ে থাকেন।মাথা নামিয়ে চেরার মধ্যে নাক চেপে ধরেন।দুই উরু দিয়ে মাথা চেপে ধরে   নীলাঞ্জনা বলেন,আচ্ছা এইভাবে বই পড়া যায়?

অনির্বান সোজা হয়ে বসলেন।মুখ গম্ভীর।নীলাঞ্জনা বই সরিয়ে রেখে মৃদু হেসে বলেন, অমনি রাগ হয়ে গেল।

–তুমি বই পড়ো।

–তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?কিছু মনে করবে নাতো?

কৌতুহলি চোখ তুলে তাকালেন অনির্বান।

–তুমি আমাকে না আমার শরীরটাকে ভালবাসো?

অনির্বান চুপ করে কি ভাবেন তারপর বললেন,তুমি এ কথা কেন জিজ্ঞেস করলে আমি   জানি না। কিন্তু স্পষ্ট করে তোমাকে বলি,আলাদা করে এই দেহের কোন তাৎপর্য নেই আমার কাছে। যেদিন তোমাকে প্রথম দেখলাম মনে হয়েছিল এই আমার আশ্রয়।এমনভাবে তোমাকে পাবো নিশ্চিত ছিলাম না।তুমি যদি আমাকে প্রশ্রয় নাও দিতে তাও আমি তোমাকে ভালবাসতাম। শারীরি মিলনের জন্য কোনো আকুলতা বোধ করিনি।তোমাকে ভালবেসেছি বলেই মিতুকে ভালবেসেছি,ভালবেসেছি তোমার শরীর তোমার সুখ তোমার দুঃখ সব নিজের করে নিয়েছি।

নীলাঞ্জনা দুহাতে অনিকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে চেপে ধরে বলেন, আমি খুব সুখী হয়েছি আমার কোন খেদ নেই।ওই গোয়ারটাকে ছেড়ে আসার সময় বুঝিনি তোমাকে পেয়ে বুঝেছি ঈশ্বর পরম করুণাময়।

অনি স্তন বৃন্ত মুখে পুরে চুষতে থাকেন।অনির ভারে এলিয়ে পড়েন নীলাঞ্জনা,চোখ বুজে উপভোগ করেন অনাস্বাদিত সুখ।মনে মনে ভাবেন বড়দির বাড়িতে এরুকম যখন তখন সুযোগ পাওয়া যাবে না।সংযত থাকতে যে কটাদিন সেখানে থাকবেন।সুচি বড়দির একমাত্র সন্তান সারাদিন মেয়েটা কি যে ভাবে কে জানে।ছুটি শেষ হলে আবার কমলাবাড়ি চলে যাবে।একা-একা সারা জীবন কিভাবে কাটাবে মেয়েটা ভেবে মনটা     খারাপ লাগে। মেয়েটাকে নিয়ে বড়দির অশান্তির শেষ নেই। কিছু বোঝাবে তার উপায় নেই।ভাববে মাসীমণি বোধহয় তাকে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন।অনির্বান দুহাতে নীলাঞ্জনার পা ফাক করতে চেষ্টা করেন।নীলাঞ্জনা পা ছড়ীয়ে দিলেন।গুদের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে চুক চুক করে চুষতে থাকেন।সুখে সারা শরীর শিহরিত হতে লাগল। পারুদের ফিরে আসার সময় হয়ে এল সে কথা মনে করিয়ে দিলেন নীলাঞ্জনা।কাল একবার বিকেলের দিকে   অনিকে নিয়ে বেরোবেন।কিছু কেনাকাটা করার দরকার।বড়দির জন্য একটা শাড়ি দেখে এসেছেন।

–উঃ মাগো-ও-ও।ঘন ঘন মাথা নাড়তে থাকেন নীলাঞ্জনা।কুল কুল করে রস নিঃসৃত হতে থাকে।

হাত দিয়ে অনির মাথা ঠেলতে লাগলেন।অনির্বান জোঁকের মত মুখ চেপে রাখেন নীলাদির গুদে। একসময় নীলাঞ্জনার শরীর শিথিল হয়ে এলিয়ে পড়ে।বড় বড় শ্বাস পড়তে লাগল।গুদ থেকে মুখ তুলে হাসি হাসি মুখে তাকালো অনির্বান।

–তেষ্টা মিটেছে?নীলাঞ্জনা জিজ্ঞেস করে।

–এই তৃষ্ণা কি মেটার?

সুচির শরীরে কি কোনো আকুলতা নেই?নীলাঞ্জনা মনে মনে ভাবেন।অনির্বানকে জিজ্ঞেস করেন,অনি আগে কে তোমার তেষ্টা মেটাতো?

–নীলাদি সত্যিই অবাক ব্যাপার– বিশ্বাস করো তুমিই আমার তৃষ্ণার কারণ।আগে অনুভবই করতাম না।ঐ যে একটা কথা আছে না–ঘোড়া দেখলে খোড়া।অনির্বান হাসেন।

অনি ঠিকই বলেছে,সুচির মনে হয়তো এই আকাঙ্খা জন্মই নেয় নি। আগেকার কালে কতই তো বাল-বিধবা ছিল তারা রমণ সুখের স্বাদ না পেয়েও জীবনের একটা বড় সময় দিব্যি একাদশী করে স্বাভাবিক সাত্বিক জীবন কাটিয়ে দিত।সবটাই হয়তো মনের ব্যাপার।জানি না মেয়েটার কপালে কি আছে? এইসব কথা মনে মনে আন্দোলন করছেন এমন সময় শুনতে পেলেন ওরা ফিরেছে। ‘দিগম্বরের মত দাঁড়িয়ে থেকো না’ অনিকে ধমক দিয়ে তাড়াতাড়ি গায়ে শাড়ী জড়িয়ে দরজা খুলতে গেলেন।

ঢুকেই টুকুন অভিযোগ করে,মামণি দিদিভাইরা ঝগড়া করছিল।

বিরক্ত পারমিতা ভাইকে ধমক দিয়ে বলে,মামণি ওকে শাসন করো এখন থেকেই বাজে অভ্যাস হচ্ছে।দেখেছো দিদিভাই তুমিও ওকে ভীষণ আস্কারা দাও।

টুকুন একেবারে নীলাঞ্জনার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে ওদেরে কথা চুপচাপ শুনতে থাকে।সারাদিন যা কিছু হবে এমন কি অনি কিছু করলেও টুকুন চুপি চুপি মামণিকে এসে বলবেই। কেমন নিরীহভাব করে দাঁড়িয়ে আছে যেন কিছুই জানে না।সুচিস্মিতার ওকে দেখে হাসি পেয়ে যায়। একা-একা ছোটাছুটি করছিল নিজের মত অথচ সব কিছু খেয়াল করছিল।অনির্বান কোলে নিতে এলে হাত ছাড়িয়ে নিল।অনিক পছন্দ করে না কেন? হয়তো তার মামণির উপর আর কেউ অধিকার ফলাক পছন্দ নয়।

–মামণি তুমি ওকে কিছু বলবে না? পারমিতা বলে।

চাপা এসে বলে,সবাইকে চা দিয়েছি।

–চাপা শোনো আমরা সোমবার চলে যাবো।দিনকয়েক পর ফিরবো।তুমি তোমার ভাইকে এ-কদিন এখানে এনে রেখো।

[৩৯]

আমাদের শান্তি নিকেতন

আমাদের সব হতে আপন

আমরা হেথায় মরি ঘুরে

সে যে যায়না কভু দূরে

মোদের মনের মাঝে প্রেমের সেতার

বাঁধা যে তার সুরে।

ছাতিম তলায় দাঁড়িয়ে নীলাভ সেনের কানে বাজে সঙ্গীতের ধ্বনি।মন প্রাণ অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে ওঠে।নীচু হয়ে বেদীতে হাত রাখেন, এখানেই একদিন গুরুদেব বসতেন।চারদিক গাছ পালায় ভরা ডালে ডালে পাখীদের কলতান।বেশ কিছু দূরে ক্ষীণ ধারায় বয়ে চলেছে কোপাই নদী।মনে পড়ল নির্মল স্যারের কথা।তিনি বলতেন যারা কেবল ভাঙ্গে তারা গড়তে জানে না।যে দেশের মাটিতে বুদ্ধ চৈতন্যদেব জন্মেছিলেন সেখানে আজ শুরু হয়েছে একী তাণ্ডব। কোন সর্বনাশের নেশায় মেতেছে তরতাজা তরুণ প্রাণ।নির্মল স্যার আজ নেই কিন্তু তার স্মৃতি হৃদয়ে থাকবে অমলিন। বেদনায় ছায়া ঘনিয়ে আসে মনে।

–স্যার।

কে? ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখলেন এক ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছেন।

–সুপারিণ্টেণ্ড মশাই আমাকে পাঠালেন আপনাকে নিয়ে যাবার জন্য।

–আজ আমাকে ফিরতে হবে।তাকে আমার নমস্কার জানাবেন।আমি আর একদিন আসবো।

নীলাভ সেন বুঝতে পারেন তার পদের বিড়ম্বনা,সহজ সাধারণভাবে তার পক্ষে ঘোরাঘুরি করা সম্ভব নয়। দ্রুত গাড়ীর দিকে পা বাড়ালেন।শান্তি নিকেতন বস্তুত শান্তির আশ্রয়। খুব ভাল লাগছে। গাড়ীর কাছে  যেতেই রতন সিং দরজা খুলে দাড়াল।আলো কমে এসেছে,জন বিরল পথ ঘাট।গাড়িতে উঠে লায়েক বাজার দিয়ে যাবার ফরমাশ করলেন।

দিনে দিনে টুকুন অনির প্রতিদ্বন্দী হয়ে উঠছে।এই এক নতুন সমস্যা।কাল রাতে অনি চোদার জন্য প্রস্তুত তার আগে চুমু দিয়ে মাই চুষে সবে চিত করে ঢোকাতে যাবে বাইরে টূকুনের গলা পাওয়া গেল।

দিদিদের কাছ থেকে উঠে এসেছে বায়না মামণির কাছে শোবে।দরজা খুলতেই গটগট করে ঢুকে একেবারে দুজনের মাঝখানে নীলাঞ্জনাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।অনির তখনকার কার প্যাঁচার মত মুখ দেখে হাসি পেয়ে গেল নীলাঞ্জনার।ছেলেকে জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, দিদিভাইদের ছেড়ে চলে এলে তুমি, ওদের খারাপ লাগল না?

–ছোড়দিটা ভাল না আমাকে চিমটি কাটছিল।আমার সঙ্গে গল্প করছিল না।

–আচ্ছা এখন ঘুমাও।নীলাঞ্জনা কি করবেন টুটুনকে নিয়ে,সারাক্ষন তার মামণিকে আগলে আগলে রাখবে। বুঝতে চায়না মামণি তার একার নয় ছোড়দিরও মামণি। সকালে অনিকে একা পেয়ে নীলাঞ্জনা বলেন,তুমি রাগ করেছো?টুকুন ছেলে মানুষ।

–আমি কি বলেছি রাগ করেছি?

–একটু পরে ওরা ঘুরতে বেরোবে তখন একবার করে আমরা বাজার করতে যাবো।

–আচ্ছা নীলাদি আমার প্রতি টুকুনের এত রাগ কেন বলতো?

–রাগ তোমার প্রতি নয়।ওর মামণির উপর কারো আধিপত্য পছন্দ নয়।বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এমন সময় টুকুন অভিযোগ নিয়ে আসে,মামণি ছোড়দি আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না।

–কি হচ্ছে পারু?তুই ওর সঙ্গেও রেষারেষি শুরু করলি?

তিনজনে বেরিয়ে যেতে অনির চোখে বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে যায়।করতলে নীলাদির পাছা খামচে ধরেন। নীলাঞ্জনা বিরক্ত হয়ে বলেন,কি হচ্ছে কি শাড়ীটা ছিড়বে তো?

নীলাঞ্জনা খাটের উপর বসে কাপড় কোমর অবধি তুলে চিত হয়ে বলেন,নেও করো।

অনির্বান পা দুটো কাধে তুলে নিয়ে বলেন,তুমি কি আমার মন রাখার জন্য বলছো?

–এত কথা বলো কেন?তোমার করতে ইচ্ছে হচ্ছে না?

অনির্বান প্যাণ্ট নামিয়ে উচ্ছৃত লিঙ্গটা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলেন,তোমার কষ্ট হলে থাক।

–ন্যাকামি কোর না।ওইতো ল্যাওড়ার সাইজ–হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে ঢোকাও।

অনির্বান উরু দুটো জড়িয়ে ধরে চেরার মুখে লিঙ্গ ঠেকিয়ে চাপ দিতে পুর পুর করে আমুল বিদ্ধ হল।

অনি জিজ্ঞেস করেন,ভাল লাগছে?

–হুউম,নেও করো।বাজার যেতে হবে তো?

অনির্বান কিছুটা মনঃক্ষুন্ন ল্যাওড়ার সাইজ নিয়ে কথা বলায়।জোরে জোরে ঠাপ দিতে লাগলো।গরমে ঘাম হচ্ছে পচ পচ করে শব্দ তুলে অনির্বান চুদে চলেছে একটানা। দম নেবার জন্য থামতেই নীলাঞ্জনা বলেন,থামলে কেন?

আবার শুরু করেন অনির্বান।হাপিয়ে উঠেছে।নীলাঞ্জনা আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে দিলেন।

–নীলাদি–নীলাদি হয়ে গেল –হয়ে গেল,বলতে বলতে ফিচিক ফিচিক করে বীর্যপাত করে।

কিছুক্ষন পর বলেন,নীলাদি তোমার তো হয়নি তাই না?

–ঠিক আছে,এবার ওঠো।নীলাঞ্জনা তাগাদা দিলেন।অনির্বান উঠতে নীলাঞ্জনা বাথরুমে গেলেন।ভাল করে জল দিয়ে গুদে আঙ্গুল ঢুকিয়ে পরিস্কার করে বেরিয়ে এলেন।

ওরা হাটতে হাটতে চলে এসেছে অনেক দুর।সুর্য আকাশ রাঙ্গিয়ে দিয়ে পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। না আলো না অন্ধকার,মাঝে মাঝে দু-একটা সাইকেল রিক্সা চলে যাচ্ছে। একসময় পারমিতা বলে,দিদিভাই তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

–না।

কেউ কোন কথা বলে না।সুচিস্মিতা বলে,বিয়ের কথা ছাড়া অন্য কথা থাকলে বল।

–কাল বড়মাসীর সঙ্গে দেখা হলে যদি জিজ্ঞেস করেন,বিয়ের কথা তুমি কি বলবে?

–সেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিয়ের কথা।শোন আপাতত বিয়ে নিয়ে আমি কিছু ভাবছি না।

–কিন্তু ভাবার তো একটা সময় থাকে।

খিল খিল করে হেসে ফেলে সুচিস্মিতা,তুই বলছিস বুড়ি হলে আর ভেবে কি হবে?

–তুমি হাসছো?একটা কথা বললে তুমি বলবে খুব পাকা হয়েছিস।তুমি তখনো আসো নি মামণিকে দেখতাম কলেজ যায় চাপাদি রান্না করে দিব্যি চলছিল সব।কোন অভাব ছিল না তবু কোন কিছুর মধ্যে প্রাণের সাড়া ছিল না।যন্ত্রের মত চলছিল সব।অনু মামণির জীবনে আসার পর দেখলাম মামণির মধ্যে নতুন উদ্যম সংসারের চেহারাটাই বদলে গেল রাতারাতি।

তার বোনটির বয়স অনুপাতে ভাবনা চিন্তা অনেক পরিণত সুচি ভাবে।গল্প করতে করতে অনেক দূর চলে এসেছে সুচিস্মিতা বলল, এইবার ফেরা যাক,অনেক দূর চলে এসেছি।

–দিদিভাই কাল এই সময় আমরা কু-ঝিক-ঝিক….।

টুকুন পিছন দিকে ছুট দেয়।পারমিতা পিছন থেকে ডাকে,টুকুন–এই টুকুন..দেখেছো এইজন্য ওকে আনতে চাইনা।পারমিতা ওর পিছন পিছন ছূটে ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসতে থাকে।সুচি অনেকটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে।

দূর থেকে একটা গাড়ী আসছে হেড লাইট জ্বেলে।পারু  টুকুনকে জাপ্টে ধরে রাস্তার একধারে সরে যায়।সুচি ধুলোর হাত থেকে বাচতে নাকে আঁচল চেপে ধরে।গাড়ীটা কিছুটা গিয়ে থেমে গেল তারপর পিছন দিকে আসতে থাকে।ওরা হেটে গাড়ীটা অতিক্রম করতে যাবে গাড়ির মধ্যে থেকে কে যেন ডাকলো,সুচিই।

সুচিস্মিতা সেদিকে এক পলক দেখে  দ্রুত হাটতে থাকে।পিছন থেকে পারমিতা দেখল একটা লোক গাড়ী থেকে নেমে দ্রুত সুচিদির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।ভয় পেয়ে যায় পারমিতা নির্জন পথ।সাহায্যের জন্য সেও দ্রুত এগিয়ে যায় কানে আসে,সুচি প্লিজ।তোমার সঙ্গে কথা আছে।

দিদিভাইয়ের নাম জানে মানে ভদ্রলোক পরিচিত।

সুচিস্মিতা বলল,আপনি ভুল করছেন,আমি সুচি নই আমার নাম সুচিস্মিতা বোস।আপনাকে কি আমি চিনি?

নীলাভ সেন বিস্মিত বলল,আমি নীলু সত্যি তুমি আমাকে চিনতে পারছো না?

পারমিতা ভাবে এই তাহলে সেই মূর্তিমান নীলু।

সুচি বলল,আমি একজন নীলুকে চিনতাম পলাশডাঙ্গার সঙ্গে যার নাড়ির সম্পর্ক পলাশডাঙ্গার নাম শুনলে যার রক্ত উছলে উঠতো।

কাতরভাবে বলল নীলাভ,বিশ্বাস করো আমি তোমার পাঠানো শ্লিপ দেখিনি।সিকদারবাবু পরে দেখিয়েছে।

স্কুলের দিনগুল মনে পড়ে, নীলু বলতো তোমাকে ছুয়ে বলছি বিশ্বাস করো।সুচি বলল,দেখুন মি. যাকে চিনি না তাকে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা আসছে কেন?আর তখন থেকে আপনি আমাকে তুমি-তুমি করছেন কি ব্যাপার?

–আপনি আমার সব কথা শুনুন–।

–কথা বলতে হয় বাড়ীতে আসবেন,রাস্তায় দাড়িয়ে একজন অপরিচিতের সঙ্গে কথা বলতে আমি অভ্যস্থ নই।

–তাহলে চলুন আপনার বাড়ীতে।

–মানে বলা নেই কওয়া নেই হুট করে একজনের বাড়িতে গেলেই হল?

–আচ্ছা চলুন আপনাকে পৌছে দিচ্ছি।

আমার সঙ্গে আমার বোন ভাই আছে আমরা হেটে এসেছি হেটেই যেতে পারব।

–শুনুন মিসেস সেন গাড়ী রয়েছে–।

পারমিতার মনে হল বাড়াবাড়ি হচ্ছে,বেচারি ঘেমে নেয়ে একশেষ। পারমিতা গাড়ীর দরজা খুলে টুকুনকে নিয়ে গাড়ীতে উঠে বলল,দিদিভাই চলে এসো।। দরজা খুলে পারমিতা গাড়িতে উঠে বলল,এসো দিদিভাই।

পারুর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে অগত্যা সুচিকে গাড়ীতে উঠে বসতে হল।

সামনে রতন সিং নিলাভ সেন ড্রাইভারের পাশে।পিছনে তিন ভাই বোন। সুচি বোনকে স্বর নামিয়ে বলল,কোনোদিন গাড়ীতে চড়িস নি।

–স্যরি  দিদিভাই অনেকটা হেটে হেভি টায়ার্ড।

–হা এবি তায়ার।টুকুন বলল।

দিদিভাই যা বলেছিল তার সঙ্গে মিলছে না,ওকে তো ওরকম মনে হচ্ছে না।শান্ত বিনয়ী এতবড় পদে আছে তার কোনো আঁচ নেই। গাড়ী বাড়ির সামনে পৌছাতে পারমিতা বলল,আমরা এখানে নামবো।

একে একে সবাই গাড়ী থেকে নামে।নীলাভ সেন ভাবেন ভালই হল মি.সেনের সঙ্গে আলাপ করা যাবে।ভদ্রলোকের সম্পর্কে জানা যাবে।একবার মনে হল ডিএমকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে জানলে ভদ্রলোক বিরক্ত হবেন নাতো?সুচিকে অস্বস্তিতে পড়তে হবে নাতো?

যেতে যেতে পারু বলল,কি হল আসুন।

রতন সিং-কে গাড়ীতে বসিয়ে নীলাভ সেন ওদের পিছন পিছন বাড়ীতে ঢূকলেন।পারমিতা এক নজরে দেখে নিয়েছে। বেশ হ্যাণ্ডসাম দেখতে,দিদিভাইয়ের পছন্দ আছে।দুজনকে  ভাল মানাবে।শঙ্কা হচ্ছে দিদিভাই না সব গুবলেট করে দেয়।দিদিভাইয়ের  সঙ্গে সঙ্গে নীলাভ সেন তাদের ঘরে ঢূকলেন।পারমিতা কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না।সে টুকুনকে নিয়ে  অন্য ঘরে চলে গেল।

সুচিস্মিতা খাটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,কি বলবে্ন বলুন।

–তুমি বসবে না?

–দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার অভ্যেস হয়ে গেছে।

–জানি তুমি আমার উপর রাগ করেছো,গড সেক বিশ্বাস করো ঐ যে পার্টি লিডারটা এসেছিল কি বলে জানো–মেজাজ খারাপ করে দিল।আমার শরীরটাও ভালো ছিল না, আমি জানতেই পারিনি তুমি গেছিলে–সিকদারবাবুও কিছু বলেনি– ।

–তোমার কথা শেষ হয়েছে?

–তুমি আমাকে অপমান করছো?

–তুমি মান-অপমান বোঝ তাহলে?

নীলাভ সেনের মনে হল তাকে চিনতে পেরেছে।বলল,তোমার জায়গায় থাকলে আমারও রাগ হতো অভিমান হতো।যখন জানলাম তুমি এসে ফিরে গেছো কি যে কষ্ট হয়েছে তোমাকে বোঝাতে পারবো না।

–বোঝাতে হবে না, আমি বুঝেছি।তোমাকে কমলাবাড়ি স্কুলে দেখে অবাক হয়েছিলাম।আমি সেদিন কোন উদ্দেশ্য নিয়ে যাইনি।যাক এসব অবান্তর কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাইনা।রাত হচ্ছে।

–বুঝেছি তুমি চলে যেতে বলছো।

–তোমায় থাকতে বলবো কোন অধিকারে?

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নীচু করে  কি যেন ভাবলেন নীলাভ সেন,আচ্ছা আসি।তোমার হাজব্যাণ্ডের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলে না উনি কি বাড়ীতে নেই?

জ্বলন্ত দৃষ্টি মেলে তাকায় সুচিস্মিতা। থতমত খেয়ে নীলাভ সেন বলেন,আপত্তি থাকলে থাক।আমি এমনি বলছিলাম–বিয়েতে বলোনি ভাবলাম এই সুযোগে তোমার স্বামীর সঙ্গে আলাপ হবে–।

হাদাটার কবে বুদ্ধি হবে সুচি রেগে বলল,তোমার জন্য আমি কি স্বামী তৈরী করবো?

হতবাক নীলাভ সেন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে,মানে?এতক্ষনে বিষয়টা পরিষ্কার হল।সুচি ঠিকই বলে হাদা। ইচ্ছে করছে নিজের গালে কষে একটা থাপ্পড় দিই।

–তোমার প্রশ্ন শেষ হয়েছে?এক্ষুনি আমার মাসীমণি এসে পড়বেন,তুমি যাও।

নীলাভ সেন সরাসরি সুচির দিকে তাকিয়ে বলল, আমি একদিন তোমাদের বাড়ি গেছিলাম তোমার কাকু আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল।আজ তুমি আমাকে অপমান করছো কিন্তু মানুষের সহ্যের একটা সীমা থাকে।

–কি করবে তুমি?

— কি করব দেখবে?

নীলাভ সেন যা করলেন সুচিস্মিতা তার জন্য প্রস্তুত ছিলনা।নীলু হাদা বুদ্ধু?

–এ্যাই কি হচ্ছে–।

নীলু আচমকা তার উপর ঝাপিয়ে পড়তে সুচিস্মিতা চিত হয়ে বিছানায় পড়ে গেল।নীলাভ সেন মুখ চেপে ধরলেন সুচির মুখে।’উমহ-উমহ’ করে বাধা দিলেও বলিষ্ঠ বাহু বন্ধন হতে নিজেকে মুক্ত করতে পারে না।

দরজা খুলে ঘোমটায় ঢাকা মুখ চোখে তারের চশমা এক বৃদ্ধা মহিলা ঢুকে গলা কাঁপিয়ে  বলেন,কি হচ্ছে এসব?

ছিটকে গেলেন নীলাভ সেন।সুচি সোজা হয়ে করতলের পিছন দিয়ে ঠোট মোছে।মরীয়া নীলাভ সেন বলেন,আমি সুচিকে ভালবাসি–ওকে বিয়ে করতে চাই।

–কিন্তু বিয়ের আগেই এসব কি হচ্ছে?

নীলাভ সেনের মনে হয় এই মহিলা সম্ভবত সুচির মাসীমা,আন্টি আমরা একসঙ্গে পড়তাম।

সুচিস্মিতা বৃদ্ধাকে ভাল করে দেখে অনেক কষ্টে হাসি সামলাতে চেষ্টা করে।মনে মনে ভাবে হাদা গঙ্গারাম আবার ডিএম হয়েছে।

–শোনো বাবা,বিয়ে তো খেলা নয়।বিয়ে করবো বললেই হয় না।দু-পক্ষের সম্মতি থাকতে হবে।সুচি আমার বড়দির মেয়ে তাদের মতামত নেওয়া জরুরী।

বাইরে নীলাঞ্জনার গলা পাওয়ে গেল।টুকুন ছূটে গিয়ে হাসতে হাসতে নালিশ করে,মামণি ছোরদি শালি পরেছে।হি-হি-হি।

নীলাঞ্জনা বুঝতে পারেন ছেলে কি বলছে।ততক্ষনে বৃদ্ধা মহিলা উধাও।ঘরে ঢুকে নীলাভ সেনকে দেখে সপ্রশ্ন দৃষ্টি তুলে সুচির দিকে তাকায়।ইতিমধ্যে কোথা থেকে পারমিতা এসে বলে, মামণি এই ভদ্রলোক নীলাভ সেন,এখানকার জেলা শাসক।সুচিদিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।

–আপনি বসুন।নীলাঞ্জনা বলেন।

–আন্টি আপনি আমাকে ‘তুমিই’ বলবেন।

–ঠিক আছে চা খেয়েছো?চাপা চা দিস নি?

–ছোড়দি বলল এখন দিতে হবে না।চাপা সাফাই দেয়।

নীলাঞ্জনা মেয়েকে দেখেন,পারুর নাকে একটা কাচভাঙ্গা পুরানো চশমা।জিজ্ঞেস করেন,কি ব্যাপার তুই চশমা লাগিয়েছিস কেন?

সুচিস্মিতা হাসি সামলাতে ঘর তেকে বেরিয়ে গেল।এতক্ষনে সমস্ত ব্যাপারটা নীলাভ সেনের কাছে পরিস্কার হয়।আগেও তার একটু সন্দেহ হয়নি তা নয়।পারমিতা মিটমিট করে হাসছে।চাপা চা নিয়ে ঢোকে।নীলাঞ্জনা বললেন, আমাদের চা-ও এখানে দিয়ে যাস।নীলুর দিকে তাকিয়ে বলেন,তুমি বোসো আমি চেঞ্জ করে আসছি।এই আমার হাজব্যণ্ড অনির্বান দাশগুপ্ত।অনি তোমরা কথা বলো।

নীলাঞ্জনা বেরিয়ে যেতে অনির্বান আর নীলাভ সেন সোফায় মুখোমুখি বসেন। অনির্বান বলেন,বাইরে সশস্ত্র পুলিশ দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম।

কিছুক্ষন পর নীলাঞ্জনা ঢুকলেন।নীলাভ সেন আড়চোখে  পারমিতাকে দেখছেন,দুষ্টু হাসি তার ঠোটে।নীলাঞ্জনা আলাপ করিয়ে দিলেন,এই আমার মেয়ে পারমিতা আর এইটি আমার ছেলে ডাক নাম টুকুন।আমি পারুর কাছে সব শুনলাম।টুকুন তোমার সুচিদিকে ডাকো তো বাবা। শোনো নীলু কাল আমরা বড়দির বাড়ী যাচ্ছি।বিয়ে পাকা করতে গেলে তোমাকে সেখানে যেতে হবে।

–আণ্টি এই বয়সে আর টোপর পরে বিয়ে করা কি সম্ভব?

–সে না হয় রেজিষ্ট্রি করে হবে কিন্তু তাদের মত নেওয়া দরকার।

সুচিস্মিতা গম্ভীরভাবে ঢুকল,নীলাঞ্জনা সুচিকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,তোর ঠোটে কি হল? ফুলেছে কেন?

সুচিস্মিতা কিছু বলার আগে পারমিতা বলে,আমার মাথার সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে।

–ধাক্কা লাগে কেন?সব সময় হুড়োহুড়ি দেখে চলতে পারোনা?একটা কিছু হয়ে গেলে?

–না মানে আমাকে দেখে ছুটে যেতে গিয়ে লেগে গেছে।নীলাভ সেন বলেন।

নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে সবাইকে দেখেন,কি ব্যাপার বলতো একজনকে জিজ্ঞেস করি আর একজন উত্তর দেয়?

টুকুন বলে,আমি জানি বলবো?

পারমিতা বলে ,তোমাকে আর পাকামী করতে হবে না।ভাইকে ধরে নিয়ে অন্য ঘরে চলে যায় পারমিতা।

–আজ আসি? আপনারা যান, দু-একদিনের মধ্যে আমি যাচ্ছি।ব্যারিষ্টার বোস রাজি হবেন তো?

নীলাঞ্জনা বললেন,সুচির বয়স হয়েছে এখন আর কচি খুকী নয়।তুমি চিন্তা কোরনা।

সুচিস্মিতা এগিয়ে দিতে গেল।তুমি কি করেছো বুঝেছো?মাসীমণির নজরে ঠিক পড়েছে।জানোয়ার কোথাকার, একেবারে কামড়ে খেতে চায়।

–সত্যি সব সময় তোমার কথা মনে পড়ত তোমার বুক ছুয়ে বলছি বিশ্বাস করো।

সুচিস্মিতা বুক ছোবার আগেই সরে যায়।

[৪০]

গাড়ি ছুটে চলেছে ডিএম বাংলোর দিকে।আকাশে তারার আলো জ্বেলে যেন শুরু হয়েছে উৎসব।ফুরফুর করে হাওয়া ঢুকছে গাড়ির ভিতর।নীলাভ সেন পরম আনন্দে হেলান দিয়ে বসে অতীত স্মৃতি চারণ করছেন।স্কুলে যেদিন সুচিস্মিতাকে দেখেছিলেন তার মনের মধ্যে কেমন একটা অনুভুতি হয়েছিল।তাকে প্রেম বলে কি না জানা নেই।হতেও পারে সুচিস্মিতার পারিবারিক পরিচয় জেনে মাথা তোলার সাহস হয় নি।স্বীকার করতে বাধা নেই সুচিই তাকে সাহস যুগিয়েছে।সীমায় আবদ্ধ না থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছিল। অনেকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করলেও সুচি আমল দেয় নি। কত মেয়েই তো ছিল অন্য কাউকে দেখে তো মনের মধ্যে হাহাকার বোধ জাগেনি?পাঞ্চালি লায়লি সিং কণিকা ম্যাম রঞ্জনা–কারও বেলায় এমন হয়নি।সুচিকে দেখে তার কথা ভেবে কেন এমন হয়?কি আছে সুচির যা আর কারো নেই? যা তাকে তাকে পাগলের মত আকর্ষণ করে সুচি হাসলে ভাল লাগে সুচি রাগলে ভাল লাগে।সুচি যখন বলল জানোয়ার তাও ভাল লেগেছিল।ওর মাসতূতো বোন কি যেন নাম?মেয়েটা ভীষণ জলি,দুষ্টুও কম নয় যা  চমকে দিয়েছিল! সুযোগ পেলে মজা দেখাবেন।কি একটা মনে পড়তে লজ্জা পেলেন নীলাভ সেন।যখন সুচিকে চিত করে চেপে ধরে চুমু খাচ্ছিলেন ঝাপ্টাঝাপটিতে  তার লিঙ্গে সুচির হাতের স্পর্শ লেগেছিল।ইচ্ছাকৃত নাও হতে পারে।কেন না সুচি দ্রুত সরিয়ে নিয়েছিল হাত।

টুকুন মামণির কাছে শুয়েছে।দু-বোনের চোখে ঘুম নেই।পারমিতা বলে,কতদিন পর বড়মাসীর সঙ্গে দেখা হবে তোমার খুব ভাল লাগছে তাই না?

–হুউম।আচ্ছা পারু ঠো্টটা কি খুব ফুলেছে?

–মামণির ঠিক নজরে পড়েছে।আচ্ছা সুচিদি যখন চুমু খাচ্ছিল কেমন লাগছিল তোমার?

–আমি জানিনা।লাজুক গলায় বলে সুচি।

–আমি একটা কথা ভাবি,ভগবানের কি অদ্ভুত সৃষ্টি তাই না? মুখের মধ্যে জিভ দিয়ে কি রকম খাবার নাড়া চাড়া করার ব্যবস্থা,হাত দিতে হয় না।আবার–।

–কি আবার?

–ছেলেদের ঐটা কি রকম ডিজাইন করে তৈরী করেছে।

–তুই খুব ফাজিল হয়েছিস।সুচিস্মিতা ধমক দিল।কি করে জানলি তুই দেখেছিস?

–হুউম,দেখবো না কেন?

–কার দেখলি,কারো সঙ্গে প্রেম-ফ্রেম করছিস নাতো?

–ধ্যেত! প্রেম করতে হবে কেন?ছেলেরা তো বের করে যেখানে-সেখানে ইয়ে করে।তাছাড়া একদিন অনুরটা দেখেছি।চার-পাঁচ ইঞ্চি মত,পেচ্ছাপ করে চামড়াটা একবার খুলছে আবার বন্ধ করছে।হি-হি-হি।

–ভীষণ অসভ্য তুই।

–অসভ্যের কি হল?আমি কি দেখতে গেছি?চোখে পড়ে গেল কি করবো?

নীলুরটা বেশ বড় আচমকা হাত পড়ে গেছিল,ছ-ইঞ্চির উপর হবে।ভেবে শিউরে ওঠে সুচিস্মিতা।অতবড় নিতে পারবে তো?না পারলে খুব লজ্জার হবে।মাসীমণির বিছানার তলায় একটা এ্যালবাম দেখেছিল,যৌনাঙ্গের নানা ছবি।একটা ছবি ছিল একটী ছেলে দুহাতে মেয়েটির গাল চেপে মুখের মধ্যে ঢোকাচ্ছে।ভাল করে দেখতে পারে নি।পরে আর একবার বিছানা তুলে দেখতে গিয়ে পায়নি।মনে হয় সরিয়ে দিয়েছেন।নীলুটা একটা দস্যু,এমনিতে নিরীহপনা যেই শুনেছে বিয়ে হয়নি অমনি হিংস্রভাবে ঝাপিয়ে পড়ল।কেউ যদি এসে পড়ে ভয় করছিল আবার ভালও লাগছিল।পারুটা মনে হয় দেখেছে।পারুর হাত বুকের উপর পড়লে হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,কি করছিস?

–তোর জন্য মায়া হয়।এইগুলো ধরে টিপে টিপে বারোটা বাজিয়ে দেবে আর খাড়া থাকবে না।

–বাচ্চা হলে তো দুধ খাবে তখন এমনি ঝুলে যাবে।

— বাচ্চার বাবাও দুধ খায় একটা বইতে পড়েছি।

–কোথায় পেলি বই?তুই খুব পাকা হয়েছিস।

–হি-হি-হি।আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ের কাছে দেখেছি,পাতলা বই।এমা কি সব বানিয়ে বানিয়ে লেখে কোন মানে হয় না।

–বানিয়ে বানিয়ে মানে?

–আমার লজ্জা করছে হাগুর জায়গাতেও নাকি ঢূকায়।

পারু জানে না।যারা সমকামী তারা পায়ু মিলন করে।কি করছে নীলু এখন?ঘুমিয়ে পড়েছে?মুসলিম মহিলা নীলুর রান্না করে। কেমন রান্না করে?

–কি ভাবছো সুচিদি?পারু জিজ্ঞেস করে।

–কি আবার ভাববো?

–ডিএম সাহেবের কথা ভাবছো।ঠিক বলিনি?

–রাত হয়েছে এবার ঘুমোতো।কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।

–সে তুমি যাই বলো তোমার চোখে মুখে কিন্তু একটা জেল্লা এসেছে।ভাবছো কখন আবার দেখা হবে?

নীলাভ সেন শুয়ে শুয়ে ভাবছেন কতকাল পরে আবার পুরানো পাড়ায় যাবেন।নির্মল স্যার থাকলে খুব খুশি হতেন।কনিকা ম্যাম কি বেচে আছেন?স্কুলের আগের স্টাফ আজ আর কেউ নেই।এখন যারা আছেন স্কুলে কেউ তাকে চিনবে না।ব্যারিষ্টার বোসের কথা ভেবে কিছুটা চিন্তিত।অবশ্য নীলাঞ্জনা আণ্টী সব দিক সামাল দেবেন বলেছেন।দিদির সঙ্গে আণ্টির অনেক তফাৎ কে বলবে এরা দুই সহোদর বোন।কেমন আছে এখন পলাশডাঙ্গা।মাকে ভীষণভাবে মনে পড়ছে আজ। লায়লি সিং বেচে থাকলে তার কিছু একটা ব্যবস্থা করতেন যাতে ভদ্রভাবে জীবন যাপন করতে পারতো।সেদিন লায়লি সিং যদি তাকে টাকা না দিত তাহলে আজ কোথায় থাকতো নীলু? চোখের কোল গড়িয়ে জল চলে আসে।

শেষ রাতে আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল পারমিতার,জানলা দিয়ে নরম আলো এসে পড়েছে।পাশে গভীর ঘুমে মগ্ন সুচিস্মিতা,নাইটি উঠে গেছে উপরে।সন্তর্পনে চেরার উপর হাত রাখতে বুঝতে পারলো আঠালো পদার্থ জমে আছে চেরার মুখে। ধীরে ধীরে নাইটী নামিয়ে দিল পারমিতা।এক চিলতে হাসি ফোটে পারুর ঠোটে,সুচিদি গ্রহণের জন্য কায়মনে প্রস্তুত।

সকাল হতেই শুরু হয় ব্যস্ততা।পলাশডাঙ্গায় যাবে সবার সঙ্গে দেখা হবে এসব  তো ছিলই তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্যমাত্রা।দিদিভাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা।বাইরে থেকে বোঝা যায় না দিদিভাইয়ের মধ্যে এরকম একটা অনমনীয় ব্যক্তিত্বের অস্তিত্ব।একটা ব্যাপার পারুর নজরে পড়ে নীলাভ সেনকে অনি সহজভাবে গ্রহন করতে পারেনি।অথচ নীলাভ সেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়।একেই সম্ভবত বলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত।নীলাভ সেনকে পারুর খুব ভাল লেগেছে।সেই দৃশ্যটা মনে পড়তে খুব মজা লাগে।ডিএমের ধড়াচুড়ো ছেড়ে যেভাবে দিদিভাইয়ের কাছে কাকতি মিনতি করছিল মনে হচ্ছিল যেন একটা বাচ্চা ছেলে।দিদিভাই যেমন এলোপাথাড়ি ব্যাট চালাচ্ছিল ভয় হচ্ছিল পুরো খেলাটাই না মাটি হয়ে যায়।একটা খটকা রয়ে গেছে দিদিভাইকে বারবার মিসেস সেন কেন বলছিল?

–পারু খেয়েদেয়ে একটু গড়িয়ে নে।নীলাঞ্জনা তাগাদা দিলেন।

তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে যেতে দেখল বন্ধ।বাথরুমে কে?পারু জিজ্ঞেস করে।

ভিতর থেকে সুচি সাড়া দিল।সাবান ঘষে ঘষে স্নান করছে সুচি।তাড়াতাড়ি  শাওয়ার খুলে নীচে দাঁড়িয়ে পড়ে।

আজ থেকে শুরু হল কলেজের ছুটি।সপ্তা চারেকের অবকাশ।এর মধ্যে সমস্ত ব্যাপারটা ভালয় ভালয় মিটলে স্বস্তি।নীলাভ সেন খারাপ কি?নীলাঞ্জনার খারাপ লাগেনি বড়দিভাইকে ম্যানেজ করতে পারলে জাম্বু কিছুই নয়।জাম্বু মুখে যতই তম্বিতম্বা করুক দিদিভাইয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবার সাহস নেই।বড়দিভাইকে জানে এমন অশান্তি করবে ব্যারিস্টারের ঘুম ছুটিয়ে দেবে।


Comments

Popular posts from this blog

অবৈধ সম্পর্ক [পার্ট ১]

অবৈধ সম্পর্ক [পার্ট ২]

অবৈধ সম্পর্ক (৩য় & শেষ পর্ব)